সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার যুগিখালি ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল হাসান ও তার চার সহযোগীর বিরুদ্ধে এক ভারতীয় নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সাতক্ষীরা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নির্যাতিত নারীর শ্বাশুড়ি বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন, যুগিখালি ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল হাসান, তার সহযোগী সোহাগ হোসেন, সোহাগ দফাদার, আসাদুজ্জামান আসাদ ও কদম আলি।
আদালত সূত্র জানায়, বিচারক আশরাফুল ইসলাম মামলাটি এজাহারভুক্ত করে তদন্ত পূর্বক পুলিশ প্রতিবেদন দেয়ার জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, তার ছেলে ভারতের পশ্চিমবাংলায় দিনমজুরের কাজ করতে গিয়ে কিছুদিন আগে বিথারী গ্রামের এক নারীকে বাংলাদেশে এনে বিয়ে করে। এ ব্যাপারে তার কাছে আদালতের অ্যাফিডেভিটও রয়েছে। ঘর-সংসার করার এক পর্যায়ে এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হাসান তার ছেলের বউকে নানাভাবে বিরক্ত করতেন।
গত ৭ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম আফজালের বাড়িতে গিয়ে জানান, বাজারে পুলিশ এসেছে। তোমাদের আমার সঙ্গে এখনই যেতে হবে। এ কথা বলে তার ছেলে ও পুত্রবধূকে চেয়ারম্যান স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিসের দোতলায় নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে তাদের কাছে ১৫ হাজার টাকা চেয়ে আফজালকে তিনি বলেন, তোমার বউ ভারতীয় নাগরিক। এখানে থাকতে চাইলে পুলিশকে এই টাকা দিতে হবে। অন্যথায় পুলিশ তোমার বউকে গ্রেফতার করবে।
আরজিতে আরও বলা হয়, এই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় চেয়ারম্যান থানার ওসির সঙ্গে কথা বলানোর নাম করে ওই রাতেই গৃহবধূকে নিয়ে যান। পরে তাকে থানায় না নিয়ে তোলা হয় কলারোয়ার ঝিকরা গ্রামের সঞ্জয়ের বাড়িতে।
অভিযোগে বলা হয়, ওই বাড়ির একটি কক্ষে ভারতীয় নারীকে আটকে রেখে প্রথমে আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান রবিউল হাসান ও পরে পর্যায়ক্রমে তার সহযোগী সোহাগ হোসেন, সোহাগ দফাদার, আসাদুজ্জামান আসাদ ও কদম আলি ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন। পরে আহত নারীকে গভীর রাতে চেয়ারম্যান রবিউল হাসান চৌকিদার এমাদুলের মাধ্যমে বাড়িতে পৌঁছে দেন। ভোরে গৃহবধূর শ্বাশুড়ি ঘুম থেকে উঠে বাড়ির মধ্যে নিজের ছেলের বউকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।
মামলায় তিনি আরও বলেন, সকালে বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশের নির্দেশ অনুযায়ী তাকে প্রথমে কলারোয়া হাসপাতাল ও পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর সুস্থ হয়ে কলারোয়া থানায় মামলা করা হলে পুলিশ তা রেকর্ড না করে ফেরত দেয়। বাধ্য হয়ে গৃহবধূর শ্বাশুড়ি সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করেন।
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান রবিউল হাসান সাংবাদিকদের জানান, ভারতীয় ওই মেয়েটিকে আমার ইউনিয়নে নাগরিকত্ব দেওয়া আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু আমি বলেছিলাম আদালতের মাধ্যমে আসতে। তা নিয়ে সালিশও হয়েছিল। আজ হঠাৎ শুনছি আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয় ওই মেয়েটিকে ফেরত নেওয়ার জন্য তার বাবা যোগাযোগ করে। বিষয়টি কলারোয়া থানা পুলিশকেও জানানো হয়। চেয়ারম্যান আরও বলেন, এ ঘটনায় আমার নিজ দলের প্রতিপক্ষও আগ্রহী।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ জানান, ভারতীয় ওই তরুণীর বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু আমাকে জানিয়েছিলেন, যে মেয়ে তার জিম্মায় রয়েছে। তবে, মামলার বিষয়ে এখনো আদালত থেকে কোন অর্ডার পাইনি।
বিডি প্রতিদিন/ ইমরান জাহান/ ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭