কম খরচে, অধিক ফলনে জমিতে পরিবেশ বান্ধব বায়োচার পদ্ধতি ব্যবহার করে নবাবগঞ্জে কৃষক ধানের চারা রোপন করছে। অধিক লাভবান এবং জমির গুনাগুন ঠিক রাখতেই কৃষকরা ঝুকছেন এই বায়োচার ব্যবহারে।
বায়োচার ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি, পানির ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি, সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি, মাটির পুষ্টি উপাদান ধরে রাখা, মাটিকে সংশোধন করে, মাটিতে অবস্থান কারি ছোট ছোট অনুজিবগুলোকে সক্রিয় করে তোলে। এছাড়াও রাসায়নিক সার ব্যবহারে কম লাগে। তাই খরচ কমে যায়। এতে ফলনও দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বায়োচার নিয়ে কাজ করছে বেসরকারী সংস্থা সিসিডিবি।
বায়োচার সম্পর্কে সিসিডিবি’র নবাবগঞ্জ অফিসের ইস্টিভান হেমরোং জানান, কৃষককদের বায়োচার পদ্ধতিতে চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষকদের ৪শতক জমির জন্য বায়োচার ক্রয় করে ব্যবহার করার পর চাষ কাজে সেচসহ অন্যান্য কাজের খরচের ৫০ভাগ প্রদর্শনি ক্ষেতের জন্য সিসিডিবি ছাড় দিচ্ছে। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার সদর, দাউদপুর, ভাদুরিয়া ও মোহাম্মদপুর ইউপি ছাড়াও মানিকগঞ্জের শিবালয় ও নওগা জেলার মান্দা উপজেলায় এই বায়োচার পদ্ধতি ব্যবহার করে শুরু হয়েছে ধান চাষ। গত মওসুমে দেখা গেছে ৩৩শতকে ধান চাষ করে ৩৫ মণ পাওয়া যায় সেখানে বায়োচার ব্যবহার করে ৩৮মণ ধানের ফলন হয়েছে। তবে এর প্রক্রিয়া যথাযথ করলে আরো বেশি ফলন পাবে কৃষক।
সিসিডিবি ঢাকা অফিসের প্রজেক্ট ম্যানেজার কৃষ্ণকুমার সিনহা জানান, পাইরোলসিস পদ্ধতিতে কাঠের গ্যাসে জ্বলে কার্বনটা কয়লার মধ্যে ধরে রাখে-এটাই বায়োচার। আখা বা বিশেষ ধরনের এ চুলায় পোড়ানো কাঠ কয়লা নিয়ে গুড়া করে জমি ক্ষেতে ছিটিয়ে দিতে হয়। এতে জমির পানি এবং সার ধরে রেখে গাছের পুষ্টি যোগায়। ফলে জমিতে সার এবং পানি কম লাগায় কৃষকের খরচ কমে যায়। আর পুষ্টি বেশি পাওয়ায় গাছের ফলন বৃদ্ধি পায়। বিশেষ ধরনের কাঠ কয়লা পোড়ানো চুলাটা এখন সিসিডিবি বিক্রি করে স্বল্প দামে। এ চুলা ক্রয় করে রান্নার কাজ করা যাবে এবং প্রাপ্ত পোড়ানো কয়লা দিয়ে বায়োচার কাজে লাগাতে পারবে। এক কেজি কাঠ জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করে ৮শ গ্রাম কয়লা পাওয়া যায়। আখা বা বিশেষ ধরনের চুলায় বা ৫০০ডিগ্রি তাপমাত্রায় পোড়ানো কাঠ কয়লা জমিতে ব্যবহারই বায়োচার বলা হয়। পরিবেশ বান্ধব এ বায়োচার পদ্ধতি ব্যবহারে জমির ফলনও বৃদ্ধি পায়।
উল্লেখ্য, বায়োচার সম্পর্কে সিসিডিবি’র নবাবগঞ্জ অফিসের কর্মকর্তা মো মঞ্জুরুল ইসলাম ও ইস্টিভান হেমরোং জানান, এ সিসিডিবির বিশেষ ধরনের চুলা আমাদের ফোরামের মাধ্যমে দেয়া হয়। সদস্য ফি ৫শ টাকা দিয়ে ফোরামের সদস্য হওয়া যায়। সদস্য হলে তাকে ৩ দিনের ট্রেনিং ও চুলা ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয় এবং একটি চুলা দেয়া হয়। এ চুলায় রান্নার পাশ্পাাশি বায়োচার তৈরি করে কৃষকদের কাছে ৫০টাকা কেজি দরে বিক্রি করে তারা। আমরা প্রকৃতপক্ষে চুলার মূল্য নেই না। এ বায়োচার আলু, সবজি চাষ ছাড়াও ধানের ক্ষেতেও ব্যবহার হচ্ছে। এক হেক্টর জমিতে সাধারণত ৫ টন উৎপাদন হয় কিন্তু বায়োচার ব্যবহারে ফলন প্রায় ৮-১০ টন উৎপাদন হবে। বায়োচার ব্যবহার ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কৃষকদের কাছে জনপ্রিয়। ধানের সফলতার পর এখন আমরা সবজি চাষে এটি প্রয়োগ করব।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার