সুন্দরবনে দস্যুবৃত্তিতে থাকা তিনটি বনদস্যু বাহিনীর সদস্যরা আজ রোববার দুপুরে বাগেরহাট শহরের স্বাধীনতা উদ্যানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করবেন বলে জানা গেছে । আত্মসমর্পণ করতে যাওয়া বনদস্যু বাহিনী ৩টির মধ্যে রয়েছে মেহেদী হাসান ওরফে ডন, জাহাঙ্গীর ওরফে ছোট জাহাঙ্গীর ও ছোট সুমন বাহিনী প্রধানসহ তাদের সদস্যরা।
এই তিনটি বনদস্যু বাহিনীর ২২ থেকে ৩০ জন সদস্য দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করবে। এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে এলিটফোর্স র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান র্যারের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। র্যাব এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
২০১৬ সালের ৩১ মে বাগেরহাটের মোংলায় বনদস্যু মাস্টার বাহিনীর প্রধান মো. মোস্তফা শেখ ওরফে কাদের মাস্টারের আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে সুন্দরবনে তৎপর বনদস্যু বাহিনীগুলোর আত্মসমর্পণ শুরু হয়। গত প্রায় দুই বছরে সুন্দরবনের ১৭টি বনদস্যু বাহিনীর ১৯০ জন সদস্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ইতিমধ্যেই র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। ওই সময়ে ১৭টি বনদস্যু বাহিনী দেশি-বিদেশি ৩২০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১৬ হাজার ৮৫৫ রাউন্ড বিভিন্ন প্রকার গোলাবারুদ জমা দেয়। এ
ছাড়া গত ছয় বছরে র্যাবের হাতে সুন্দরবনে দস্যুতার অভিযোগে ৫৪৫ জন গ্রেফতার হয়। গ্রেফতাকৃতদের কাছ থেকে র্যাব সদস্যরা ১৪৯৮টি দেশি বিদেশি অস্ত্র ও ৩২ হাজার ১৫টি গুলি উদ্ধার করা হয়। এসময় র্যাবের অভিযানের মধ্যে গোলাগুলিতে প্রাণ হারায় বাহিনী প্রধান ও সেকেন্ড ইন কমান্ডারসহ প্রায় শতাধিক বনদস্যু।
এলিটফোর্স র্যার-৮ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার হাসান ইমন আল রাজীব জানিয়েছেন, সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল জেলে, বাওয়ালী, মৌয়ালসহ বনজীবীদের জীবিকা নির্বিঘ্ন করতে র্যাব কাজ করে যাচ্ছে। সুন্দরবনের পেশাজীবীদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে র্যাব জিরো ট্ররালেন্স দেখিয়েছে। নিয়মিত অভিযানের কারণে সুন্দরবনের বনদস্যুরা এখন একেবারেই কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। সুন্দরবনে দস্যুতা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। সরকার সুন্দরবনের বনদস্যুদের দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ করে দিয়েছে। তাই র্যাবের মাধ্যমে আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে বনদস্যুরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে।
সুন্দরবনে গত প্রায় দুই বছরে ১৭টি বনদস্যু বাহিনীর প্রধানসহ ১৯০ জন দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে সুন্দরবনের বনদস্যু ডন, ছোট ওরফে জাহাঙ্গীর ও ছোট সুমন বাহিনীর ২২ থেকে ৩০ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করবে।
তিনি আরও বলেন, আজ সুন্দরবনের যে তিন বনদস্যু বাহিনী আত্মসমর্পণ করবে তাদের মধ্যে মেহেদী হাসান ওরফে ডন ২০০৯ সাল থেকে নিজ নামে বাহিনী গড়ে তোলেন। তার বাহিনীতে সদস্য সংখ্যা ১০ থেকে ১২জন। তার বাহিনীর বিরুদ্ধে সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় জেলেসহ বনজীবীদের অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। অপর দুই দস্যু বাহিনী জাহাঙ্গীর ওরফে ছোট জাহাঙ্গীর এবং ছোট সুমন ২০১৫ সালে নিজ নিজ নামে বাহিনী গড়ে তোলে। তাদের দলে সদস্য সংখ্যা ৭ থেকে ১০ জন। এসব বাহিনীর কাছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/১ এপ্রিল ২০১৮/হিমেল