পা দিয়ে লিখে এসএসসি পাশ করলো সেই অদম্য প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মো. ওমর ফারুক সুমন। বগুড়ার শেরপুর ডিজে হাইস্কুল থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে।
অন্য আট-দশ জনের মত চলাফেরা কথাবার্তা বলতে পারলেও জন্মগতভাবেই দু’টো হাত নেই তার। এরপরও মনের জোরের কমতি নেই প্রতিবন্ধী ওমর ফারুক সুমনের। তাই তো এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে খাতায় উত্তর লিখেছে পা দিয়ে। এমনকি পরীক্ষায় পাসও করেছে জিপিএ-৩.৬১ গ্রেড নিয়ে। তার স্বপ্ন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সরকারি কর্মকর্তা হওয়া।
পড়াশোনার দৌঁড়ে অন্যদের তুলনায় সে কোন অংশেই একেবারে কম না হলেও এই স্বপ্ন জয়ে বড় বাঁধা দারিদ্র্য।
সোমবার শেরপুর পৌরশহরের উত্তর সাহাপাড়াস্থ ওমর ফারুকের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অভাবের সংসারে যে যার মত ব্যস্ত। তার বাবা মজিবর রহমান পেশায় একজন ডেকোরেটরের শ্রমিক। তিনি কাজে গেছেন। মা ফাতেমা বেগম গৃহস্থালী কাজে ব্যস্ত। মা-বাবা, দু’ভাই ও দু’বোন নিয়ে তাদের সংসার। এরমধ্যে ওমর ফারুক সুমন সবার ছোট। দু’বোনের বিয়ে হয়েছে। আরেক ভাই ছোটখাটো ব্যবসা করে। মোটামুটি বাবার সামান্য আয়ে চলে সংসার ও সুমনের লেখাপড়া।
ওমর ফারুক সুমন জানান, পরীক্ষায় পাশের খবর জানার পর খুবই ভালো লেগেছে। আনন্দে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না। সে জানায়, ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি তার ভীষণ আগ্রহ। অভাবের সংসার হলেও মা-বাবা তাকে কখনও লেখাপড়া করা থেকে বিরত থাকতে বলেননি। সাধ্যের মধ্যে থেকেই যতটুকু পারেন তারা তার পেছনে ব্যয় করেন। আমি কলেজে ভর্তি হব, এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবো। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সরকারি কর্মকর্তা হয়ে বাবা-মার দুঃখকষ্ট দূর করবে বলে দৃঢ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন অদম্য শিক্ষার্থী ওমর ফারুক সুমন।
সুমনের মা ফাতেমা বেগম বলেন, অনেক কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া করাতে হচ্ছে। পড়াশোনার প্রতি সুমনেরও আগ্রহ রয়েছে। সে শেরপুর পৌরসভা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৪.৩৫ গ্রেড পেয়ে পিইসি পাস করে। এরপর শেরপুর ডিজে হাইস্কুলে ভর্তি হয়। সেখান থেকে ২০১৫সালে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪দশমিক ১৫ গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। ওই প্রতিষ্ঠানেই সুমন পড়াশোনা করছে। হাইস্কুলে তার কাছ থেকে অর্ধেক বেতন নেয়া হতো। কিন্তু সবকিছুর ঊর্ধ্বমুখির বাজারে বাবার পক্ষে তার পড়াশোনার খরচ যোগ দেওয়াটা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে তিনি জানান।
শেরপুর ডিজে হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আখতার উদ্দিন বিপ্লব বলেন, আমাদের বিশ্বাস ছিল ওমর ফারুক সুমন পাশ করবে। অনেক কষ্ট করেই সে লেখাপড়া করছে। তার অদম্য ইচ্ছাই তাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে বলে এই শিক্ষক মন্তব্য করেন।
প্রসঙ্গত: গেল ১ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। পরদিন ২ফেব্রুয়ারি দেশের বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় অদম্য শিক্ষার্থী ওমর ফারুক সুমনকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
বিডি-প্রতিদিন/ ই-জাহান