কড়া নিরাপত্তায় দিনাজপুরে ৩য় বারের মতো নান্দনিক নির্মাণশৈলী দিয়ে দৃষ্টি নন্দন ও সৌন্দর্য মন্ডিত বাংলাদেশের বৃহৎ দিনাজপুরের ঈদগাহ ঐতিহাসিক গোর এ শহীদ বড় ময়দানে ঈদের জামাত সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে আদায়ে সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ঈদ-উল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে ঈদের দিন সকাল ৯টায়।
দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর এ শহীদ বড় ময়দানে উপমহাদেশের বৃহৎ ঈদগাহ মাঠে প্রধান ঈদের জামাতে লাখ লাখ মুসল্লিরা নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে নেয়া হয়েছে সর্বাত্মক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নেয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ঈদগাহ মাঠ পরিদর্শনকালে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, এ ঈদগাহ মাঠে গতবছর একসাথে ৫ লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন। এবার এশিয়ার বৃহৎ এই ঈদগাহ মাঠে নামাজ পড়তে আরও দূরদরান্তের মানুষ শরীক হবেন এবং আশা করি এবার ৮ লাখ মুসল্লি এক সংগে নামাজ আদায় করবেন।
মাঠ পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক ড. আবু নঈম মুহাম্মদ আব্দুছ ছবুর বলেন, ঐতিহাসিক গোর এ শহীদ বড় ময়দানে আগামী ঈদ উল ফিতরের জামাত সফল ও শান্তিপূর্নভাবে আদায়ের লক্ষ্যে সকল ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার হামিদুল আলম বলেন, দেশের বৃহৎ এ ঈদ জামাতকে ঘিরে কয়েক স্তরের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৮ শতাধিক পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন থাকবে র্যাব ও আনসার বাহিনী। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে বিজিবি। ঈদগাহের মাঝে থাকবে ওয়াচ টাওয়ার। মাঠের চারপাশে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। প্রবেশের পূর্বে মুসল্লিদের আনা যানবাহন রাখার জন্য তিনটি পয়েন্টে চেকিংএর ব্যবস্থা থাকবে। মাঠের চারপাশে ৬টি পথে প্রবেশের সময় মেটাল ডিটেক্টরে তল্লাশির পর জামাতে প্রবেশ করানো হবে মুসল্লিদের। এ ছাড়া মাঠে প্রবেশের বিভিন্ন পথে টহল পুলিশ ছাড়াও সাদা পোষাকেও নিরাপত্তায় দায়িত্বে থাকবে। পুলিশ ছাড়াও র্যাবসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীরাও নিরাপত্তায় সক্রিয় থাকবে।
গত দুটি ঈদে এই মাঠে দিনাজপুর ছাড়াও আশেপাশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার মানুষও ঈদ জামাতে শরীক হয়েছিলেন। এবারে গতবারের চেয়ে আরও বেশী মানুষ ঈদ জামাতে শরীক হবেন এমনটাই আশা সংশ্লিষ্টদের। এতে ইমামতি করেন দিনাজপুরের জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা শামসুল হক কাসেমি।
ঈদের নামাজে অংশ নেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, বিচারপতি এনায়েতুর রহিম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইমাম চৌধুরী, জেলা প্রশাসক ড. আবু নঈম মুহাম্মদ আব্দুছ ছবুর, পুলিশ সুপার হামিদুল আলম, দিনাজপুর পৌরসভা মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
দেশের বৃহৎ এ ঈদগাহে দৃষ্টি নন্দন ঈদগাহ মিনার এ রয়েছে ৫২টি গম্বুজ। প্রধান গম্বুজের সামনে রয়েছে মেহরাব, যেখানে ইমাম দাড়াবেন, তার উচ্চতা ৪৭ ফুট। এর পাশাপাশি রয়েছে ৫১টি গম্বুজ। এ ছাড়া ৫১৬ ফুট দৈর্ঘ্যরে ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। ঈদগাহ মাঠের দু ধারে করা হয়েছে অজুর ব্যবস্থা। পুরো মিনার সিরামিক্স ইট দিয়ে আচ্ছাদিত করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলেই ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে ওঠে।
উল্লেখ্য, এর আগে দিনাজপুর ঐতিহাসিক গোর এ শহীদ বড় ময়দানে ছোট পরিসরে ঈদের নামাজ প্রতিবছরই আদায় করা হতো। সে ঈদগাহ সরিয়ে মাঠের পশ্চিমে নেওয়ার পর নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ও সৌন্দর্য মন্ডিত ঈদগাহ মিনার। এটি এখন বাংলাদেশে তথা দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহত ঈদগাহ ময়দান।
দিনাজপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য ও হুইপ ইকবালুর রহিমের পরিকল্পনা এবং জেলা পরিষদের অর্থায়নে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। ইরাকের মসজিদে নব্বী, কুয়েত, ভারত ও ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের স্থাপনার আদলে এই ঈদগাহ ময়দান সাজানো হয়েছে।
মিনার কেন্দ্রীক মাঠের আয়তন ২০ থেকে ২২ একর। তবে মাঠের মধ্যে আরও কিছু স্থাপনা অপসরণের কাজ চলছে। যা শেষ হওয়ার পর পুরো মাঠের আয়তন হবে ৬৫ একর।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার