প্রতিবেশি থাইল্যান্ড সীমান্তে মিয়ানমারের জালিয়াতি কেন্দ্রের সংখ্যা নজিরবিহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সেখানে জালিয়াতি কেন্দ্রের সংখ্যা ১১টি থেকে বেড়ে ২৭টি হয়েছে। এগুলোতে প্রায় এক লাখ পাচার হওয়া মানুষ বন্দি থাকতে পারে বলে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
মিয়ানমারের কাইন রাজ্যের থাই সীমান্তবর্তী মায়াওয়াড়ি শহরের কুখ্যাত এই জালিয়াতি কেন্দ্র ‘কে কে পার্ক’ নামে পরিচিত। এটি স্থানীয় ময়ি নদীর পাশে অবস্থিত। এলাকাটি দেখতে প্রযুক্তি ক্যাম্পাস বা আবাসিক এলাকার মতো মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি একটি জালিয়াতি কেন্দ্র। বর্তমানে এটি ২১০ হেক্টর (৫২০ একর) এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এবং কঠোর সুরক্ষিত একটি কমপ্লেক্স।
সাইবার ক্রাইম বা ইন্টারনেট জালিয়াতির এই ক্রাইম সিটিতে মূলত পিগ-বাচারিং, মানবপাচারসহ নানাবিধ অপরাধ সংঘটিত হয়।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগেও এই কে কে পার্ক এলাকা খালি মাঠ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। বর্তমানে সেখোনে রয়েছে হাসপাতাল, রেস্তোরাঁ, ব্যাংক এবং সুন্দরভাবে সাজানো লন-সহ সুন্দর সারি সারি ভিলা। এটি দেখতে প্রযুক্তি কোম্পানি সিলিকন ভ্যালির ক্যাম্পাসের মতো মনে হলেও সেখানে সংঘটিত হয় বিলিয়ন ডলারের মানবপাচার এবং নৃশংস সহিংসতার মতো জঘন্য অপরাধমূলক জালিয়াতি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমার, কম্বোডিয়া এবং লাওস কুখ্যাত কে কে পার্কের মতো জালিয়াতি কেন্দ্র পরিচালনাকারী আন্তর্জাতিক অপরাধ সিন্ডিকেটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। যেখানে পাচারের শিকার কর্মীদের ব্যবহার করে অপরাধী চক্র জটিল অনলাইন জালিয়াতি এবং প্রতারণামূলক প্রকল্প পরিচালনার মাধ্যমে বিপুল মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এসব জালিয়াতি কেন্দ্র নিয়ে নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে থাই-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় পরিচালিত এই ধরনের কেন্দ্রের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে, যার নির্মাণ কাজ আজও অব্যাহত রয়েছে।
ক্যানবেরার একটি প্রতিরক্ষা থিঙ্কট্যাঙ্ক, অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট (Aspi) থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, থাই সীমান্তে মায়ানমারের জালিয়াতি কেন্দ্রের সংখ্যা ১১ থেকে বেড়ে ২৭টিতে পৌঁছেছে। প্রতি মাসে গড়ে ৫ দশমিক ৫ হেক্টর করে বৃদ্ধি পেয়েছে এই ক্রাইম সিটির পরিধি।
গত আগস্ট মাসে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান কর্তৃক তোলা ‘কে কে পার্ক’ ও মিয়ানমারের অন্যান্য জালিয়াতি কেন্দ্র যেমন- তাই চ্যাং এবং শোয়ে কোক্কোরের ড্রোন ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় এখনও সেখানে নির্মাণ কাজ চলছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের শুরুতে অভিযান চালিয়ে প্রায় সাত হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃতরা ছিলেন থাইল্যান্ড, চীন এবং অন্যান্য দেশের নাগরিক। এছাড়া মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং সীমান্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কিছু সদস্যও ফাঁদে পড়ে আটকা পড়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উদ্ধারকৃত এই সংখ্যা সমুদ্রের বিশাল পানি থেকে একটি ফোঁটা পানি তোলার মতো মাত্র। থাই পুলিশ চলতি বছরের শুরুতে জানিয়েছিল, সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের জালিয়াতি কেন্দ্রগুলোতে প্রায় এক লাখ মানুষকে আটকে রাখা হতে পারে।
ন্যাশন থাইল্যান্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ১৪১ এবং ১৬৮ জন বিদেশি নাগরিক (তাদের অনেকেই ভারত, ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়ার নাগরিক) কে কে পার্ক এবং আশেপাশের জালিয়াতি কেন্দ্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক হয়েছেন। তাদেরকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বর্তমানে মিয়ানমারের বিভিন্ন জালিয়াতি কেন্দ্রে প্রায় ১১টি দেশের নাগরিক ফাঁদে পড়ে আটকা আছেন। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, ন্যাশন থাইল্যান্ড
বিডি প্রতিদিন/একেএ