সন্ধ্যায় পশ্চিম আকাশে বাঁকা চাঁদ দেখে সবাই যখন ঈদের খুশিতে আনন্দ মেতে উঠেছেন। ঠিক একই সময়ে বানের পানিতে ভেসে গেছে বহু লোকের ঈদ আনন্দ। বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে মনু নদীর পানি হু হু করে লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় বহু মানুষের ঈদ আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। তারা এখন সব ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন। এ চিত্র মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সন্ধ্যার কিছু সময় আগে রাজনগর উপজেলার কদমহাটা বাজারের পূর্ব পাশে পাশাপাশি দুটি স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে থাকে।
সন্ধ্যার পর কদমহাটা এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মৌলভীবাজার-রাজনগর সড়কের উপর কদমহাটা বাজারের পূর্ব পাশে দুটি স্থানে অন্তত ২৫ ফুট করে ৫০ ফুট এলাকা ভেঙে গেছে। তীব্র বেগে পানি লোকালয়ে ঢুকছে। লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিনে উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার উপর দিয়ে বয়ে য়াওয়া মনু নদীর পানি বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে মনু ডাইক ভেঙে রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভিতরে রাজনগর উপজেলার কামারচাক, টেংরাবাজার ও মনসুরনগর ইউনিয়নের শ্বাসমহাল, জীবনগঞ্জ, শ্যামরকোনা, কোনাগাঁও, প্রেমনগর, খাস প্রেমনগর, ভাঙ্গারহাট, একামধুসহ বহু গ্রামে বাড়ি ঘরে বুক সমান পানি উঠেছে। এসব গ্রামের লোকজন গবাদিপশু সহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
অপরদিকে, সকাল থেকে মৌলভীবাজার শহর ও শহরতলীর বাসীন্দাদের সতর্ক থাকার জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে বলা হয়। এই অবস্থায় গতকাল দুপুরে মৌলভীবাজার শহরের বহু ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষকে বেশ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে দেখা গেছে। যে কোন সময় শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি শহরে ঢুকতে পারে তা নিয়েই এমন আতঙ্ক।
কিন্তু সন্ধ্যার কিছু আগে কদমহাটা বাজারের পূর্ব পাশে প্রথমে বেড়ি বাঁধের নিচ দিয়ে একটা ছোট সুড়ঙ্গ দিয়ে পানি বাঁধের বাইরে লোকালয়ে আসতে শুরু করে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে সেই সুড়ঙ্গ বড় হতে থাকে এবং ইফতারের আগ মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে যায়। ক্রমে সেটি বৃহৎ আকার ধারণ করে ২৫-৩০ ফুট ভেঙে যায়। রাত ৮টার দিকে ওই ভাঙনের অদূরে পূর্ব পাশে বাঁধের আরেকটি জায়গা একইভাবে ভেঙে যায়।
গত ৩ ঘণ্টায় কদমহাটার ওই দুই ভাঙন দিয়ে প্রবল বেগে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।
এই অবস্থায় এলাকার লোকজনের ঈদের আনন্দ ফিকে হয়ে গেছে। এখন লোকজন নিজেদের নিরাপদ আশ্রয়ের আশার ছুটাছুটি করছেন।
বিডি প্রতিদিন/১৫ জুন ২০১৮/হিমেল/আরাফাত