১৮ জুন, ২০১৯ ১৭:০১

মাগুরার সেই 'পলিথিন ডাক্তার'র কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ

মাগুরা প্রতিনিধি:

মাগুরার সেই 'পলিথিন ডাক্তার'র কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ

অবশেষে মাগুরার সেই বিতর্কিত 'জাহান ক্লিনিক'র মালিক ও মাগুরা ডায়াবেটিক হাসপাতালের চিকিৎসক মাসুদুল হককে তার চিকিৎসা কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. প্রদীপ কুমার সাহা। মাগুরা প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ওনারর্স এ্যাসোসিয়েশনের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ এই আদেশ দেন সিভিল সার্জন। 

এদিকে মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে মাসুদুল হকের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে। মাগুরা প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ওনারর্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনিরুজ্জামান মিরাজ, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আহমেদ, ডাক্তার বাবুল রশিদসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এসময় বক্তব্য রাখেন।

এ সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে মাগুরা ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার ফরহাদ আহমেদ জানান, মাসুদুল হক নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ মাগুরায় অস্ত্রোপচারসহ নানা চিকিৎসা তৎপরতা চালাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে তিনি চিকিৎসক নন। তিনি নিজেকে এমবিবিএস ডিগ্রিধারী হিসেবে পরিচয় দেবার পাশাপাশি পিজিটি, সিডিডি সার্জন এ ধরণের  যোগ্যতার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি আসলে এইচএসসি পাশ। পরে ১৫ বছর রাশিয়ায় থেকে একটি ডিপ্লোমা সনদ জোগাড় করেন। দেশে ফিরে এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয়ে অস্ত্রোপচারসহ নানা প্রকার চিকিৎসা শুরু করেন। 

খন্দকার ফরহাদ আহমেদ আরো বলেন, তার ভুল অস্ত্রোপচারে অসংখ্য রোগী মারা গিয়েছে। অনেকে জটিল অসুস্থতায় ভুগছে। ২০০৫ সালে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে এক রোগীর খাদ্য নালিতে অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে তার একটি নাড়ি কেটে গেলে ক্ষত স্থান পলিথিন পেপার দিয়ে বেধে দেয় মাসুদ। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎকরা পুনরায় অস্ত্রোপচার করে পলিথিন পেপারটি বের করে। এ সময় মাসুদুল হককে ‘পলিথিন ডাক্তার’ হিসেবে উল্লেখ করে পত্র-পত্রিকায় ব্যাপক লেখালেখি হয়। যার সূত্র  ধরে স্থানীয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে তাকে জেল হাজতে পাঠায়। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে ২০০৬ সালে ড্যাবের সদস্য পদ নেয় ও বিএমডিএস ঢাকায় চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধিত হয় (যার নম্বর-এ-৪৩২১৪ তাং ১২.০৯.০৬)।  

এই নিবন্ধনের পর তিনি মাগুরায় এসে মাগুরা ডায়াবেটিক হাসপাতালের চিকিৎসক হিসাবে যোগদান করেন। এখনো সেখানেই কর্মরত আছেন। পাশাপাশি বিগত সময়ের অপকর্মে উপার্জিত অর্থে মাগুরা সদর হাসপাতালের পূর্বদিকে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করে সেখানে জাহান নামে নিজস্ব ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট স্থাপন করেন। 

ক্লিনিক মালিক সমিতির অভিযোগ, ২০১২ সাল থেকে শুরু করে বিগত ৭ বছরে তারা মাসুদুল হকের ভূয়া চিকিৎসক পরিচয় তুলে ধরে জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, ঢাকার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর একাধিক চিঠি দিয়েছে। কিন্তু কোন ফল হয়নি। বরং ডাক্তার মাসুদুল হকের অপচিকিৎসার ব্যপ্তি ক্রমশ বাড়ছে ।

গত ১৩ জুন একটি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মাসুদুল হকের সব অবৈধ পরিচয়ের তথ্য প্রমাণ উঠে এসেছে। সেখানে তিনি এমবিবিএস ডিগ্রিধারী নন এ কথা নিজেই স্বীকার করেছেন। এ প্রসঙ্গে এই টেলিভিশনের প্রতিবেদক মাসুদুল হককে তার ব্যবস্থাপত্রে এমবিবিএস লেখার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন ‘বাংলাদেশে সবই সম্ভব’। তার এই বক্তব্য দেশদ্রোহিতার শামিল উল্লেখ করে ক্লিনিক মালিক সমিতি এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান। 


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর