১৮ জুলাই, ২০১৯ ০১:৩০

‘ঘুষ দেইনি দেশ গঠনে নিজেকে বিক্রি করবো না’

সাভার প্রতিনিধি

‘ঘুষ দেইনি দেশ গঠনে নিজেকে বিক্রি করবো না’

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে অন্যতম অবদান রেখেছেন ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ দীপক চন্দ্র সাহা।

জাতিসংঘ পদকপ্রাপ্ত ওসি দীপক চন্দ্র সাহার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে একঝাক উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) রাতদিন পরিশ্রম করে সঠিক যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের ফুলেল সংবর্ধনা ও মিষ্টি মুখ করিয়েছে ধামরাই থানা পুলিশ।

সংবর্ধনায় অংশ নিয়ে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল-২০১৯ পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৪২১ জন নারী-পুরুষ তাদের অভিভাবকদের সামনে প্রতিজ্ঞা করেন ‘চাকুরি নিতে কোনও ঘুষ দেইনি তাই দেশ গঠনে নিজেকে টাকার কাছে বিক্রি করবো না’।

থানার সামনে চা বিক্রি করে ছেলেকে ১০৩ টাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি দিতে পেরে অশ্রুশিক্ত নয়নে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার ও ওসি দীপক চন্দ্র সাহাকে ধন্যবাদ জানান এক বাবা।

বাবা রউফ পেশায় একজন রং মিস্ত্রি। মেয়ে লাকি আক্তার লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি জুতার দোকানে কাজ করে। বিনা পয়সায় পুলিশে চাকরি পাওয়ার আনন্দে দু চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি তারা। সেই অশ্রুসিক্ত নয়নেই ধন্যবাদ জানান ১০০ টাকায় পুলিশে চাকরি দেওয়ার স্বপ্নদ্রষ্টা ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমানকে।

অভাবের তাড়নায় গ্যারেজ মিস্ত্রি ও সিএনজি চালক নাইম বিনা পয়সায় পুলিশ কনস্টেবল পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের তালিকাভুক্ত হওয়ার আনন্দে কেঁদেছেন। তার কান্নায় অনুষ্ঠানে আগতদেরও চোখের জল পড়েছে। চাকরি হওয়ায় তার পরিবারের লোকজনও খুব খুশি।

পত্রিকা বিক্রেতা (হকার) মোশাররফ হোসেন বলেন, আমার ছেলের এবার পুলিশে চাকরি হয়েছে। কাউকে একটি টাকা ঘুষ দেইনি। এবার আমি বিশ্বাস করেছি টাকা ছাড়াও পুলিশে চাকরি হয়।

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমানের স্বপ্নকে সফল করার লক্ষ্যে নিরলসভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করার জন্য নিয়োগের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান জাতিসংঘ পদকপ্রাপ্ত ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ দীপক চন্দ্র সাহা।

কনস্টেবল পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের সংবর্ধনার বিষয়ে ওসি (অপারেশন) মাসুদুর রহমান জানান, ঢাকা জেলায় সর্বোচ্চ তথা ধামরাইয়ে মোট ৩৯০ জন পুরুষ এবং ৩১ জন নারীকে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। কোনও প্রার্থীকেই অবৈধ লেনদেন করতে হয়নি। সকলেই সরকারি নিয়মে ১০৩ টাকা ব্যয়ের মাধ্যমেই চাকরি পাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের বিষয়ে নানা রকম যাচাই-বাছাই করে সঠিক প্রার্থীদের চাকরির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমাদের সুযোগ্য পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় এবং আমাদের অফিসার ইনচার্জ দীপক চন্দ্র সাহার প্রচেষ্টায় স্বচ্ছ নিয়োগ সফল করতে আমরা বদ্ধপরিকর।

এ বিষয়ে ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান স্যারের স্বপ্নকে সফল করার লক্ষ্যে এবার শতভাগ স্বচ্ছ নিয়োগে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পেরে আমি আনন্দিত। স্যারের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ আমি পেয়েছি এ জন্য আমি চির কৃতজ্ঞ। ১০০ টাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে ধামরাইয়ের বিভিন্ন পরিবারের মোট ৪২১ জন ছেলেমেয়েকে চাকরি দেওয়ার লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেক হতদরিদ্র ছেলেমেয়ে রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়া একটি পয়সাও অতিরিক্ত নেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, আমি পুলিশ সুপার স্যারের মঙ্গল কামনা করি। সেই সঙ্গে এবার যারা পুলিশে নিয়োগ পেয়েছে তারা দেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে বলেও প্রত্যাশা করেন।

এ সময় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা উত্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাইদুর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার তাহমিদুল ইসলাম, ধামরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাদ্দেস হোসেন, ধামরাই পৌরসভার মেয়র গোলাম কবিরসহ ১৬ ইউপি চেয়ারম্যান।

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর