২২ জুলাই, ২০১৯ ১৭:৫৬

মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ সেই সুরাইয়া ভালো নেই

রাশেদ খান, মাগুরা:

মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ সেই সুরাইয়া ভালো নেই

'সে সময়ে দায়িত্বশীল অনেক কর্তা ব্যক্তি চিকিৎসা-লেখাপড়াসহ সকল দায়ভার গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন আর কেউ খোঁজ রাখে না। সে সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে নিয়ে বিভিন্ন মহলের মাতামাতির কমতি ছিল না।' 

২০১৬ সালের ২৩ জুলাই মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হয়ে দেশব্যাপী আলোচিত শিশু সুরাইয়ার মা নামজা বেগম মেয়ের চতুর্থ জন্মদিনে ক্ষোভের সাথে এ কথা জানান। 

মাগুরা শহরতলীর দোয়ারপাড় এলাকায় সুরাইয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে সে আর দশটি সুস্থ শিশুর মত হাসছে-কাঁদছে আবার কখনো হাত-পা নেড়ে খেলছে। কিন্তু বা-চোখটি তার নষ্ট হয়ে গেছে। হাঁটা বা চলাফেরা করতে পারে না। কানেও কম শোনে।

সুরাইয়ার মা নাজমা বেগম বলেন,‘ সাড়ে ৭ মাসের গর্ভবতী অবস্থায় পেটে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর মাগুরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসকরা ঝুঁকি নিয়ে অপারেশন করে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে তাদের দু'টি জীবন বাঁচান। অপারেশনের পর শরীরের একাধিক স্থানে গুলিবিদ্ধ মুমূর্ষু নবজাতক সুরাইয়া ও তার জীবন যখন যায়-যায় অবস্থা সে সময় মাগুরার পুলিশ সুপার এহসান উল্লাহ নিজে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে নগদ অর্থ দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠান। সেই সাথে মাগুরা জেলা প্রশাসক সাহায্যের হাত বাড়ান। না হলে চা বিক্রেতা স্বামীর পক্ষে সামর্থ্য ছিল না ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করানো। সারা দেশের মানুষের দোয়া ও ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা যে আন্তরিকতা দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলেছেন এ ঋণ কখনো শোধ হবার নয়। 

তবে দুঃখের বিষয়,‘ ঢাকায় হাসপাতালে থাকা অবস্থায় মন্ত্রী-এমপিরা এসে সুরাইয়াকে সরকারিভাবে চিকিৎসা, ভরণপোষণ, লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তারা কেউ খোঁজ রাখে না। সুরাইয়ার গুলিবিদ্ধ ডান চোখটি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা পরীক্ষ-নিরিক্ষা করে বলেছেন, ডান চোখটিতে সে আর কখনো দেখতে পাবে না। তবে বাম চোখটি ভালো রাখার জন্য নিয়মিত চিকিৎসা করাতে হবে। বাম চোখের চিকিৎসার জন্য তিন মাস পর-পর ঢাকায় নেওয়ার কথা থাকলেও অর্থভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। 

অন্যদিকে সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু ভূইয়া নির্মম এ ঘটনার দ্রুত বিচার না হওয়ায় অভিযুক্ত আসামিদের জামিনে মুক্ত হওয়ার ব্যপারে ক্ষেভ প্রকাশ করেছেন। তিনি সরকারে প্রতি সুরাইয়কে উন্নত চিকিৎসার পাশাপাশি নির্মম এ ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

মাগুরা সদর হাসপাতালের সিনিয়র সাজারী ডাক্তার শফিউর রহমান বলেন, বর্তমানে সুরাইয়া একজন প্রতিবন্ধী শিশুতে পরিনত হয়েছে। সে কোমরে বল পায় না। হাঁটতে পারে না। দুই হাটু ও দুই হাত দিয়ে চলা ফেরা করে। কানেও কম শোনে। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দেওয়া প্রযোজন। 

বিডি প্রতিদিন/মজুমদার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর