প্রবল বর্ষণে উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ ফের বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তিস্তা পাড়ের প্রায় ২০ হাজার পরিবার।
বুধবার সকল থেকেই তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হু-হু করে পানি বৃদ্ধির কারণে তিস্তা অববাহিকার বসতবাড়ি ও আবাদি জমি তলিয়ে গেছে। পরিবারগুলো বসতঘর ছেড়ে তিস্তার গাইডবাঁধে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র জানায়, উজানে ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তা নদীতে হু-হু করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত মঙ্গলবার বিকেলে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ডালিয়া পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার নিচে থাকলেও মঙ্গলবার রাত থেকে পানি বৃদ্ধি পায়। রাত ৯টায় তা বিপদসীমা অতিক্রম করে ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
বুধবার সকাল ৬টা থেকে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে নতুন করে প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। প্রচুর বৃষ্টিপাতে ঘর থেকে বের হতে পারছে না বন্যা কবলিত মানুষ। এতে চরম দুভোর্গে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষ।
এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লালমনিহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তার ডান তীরের দক্ষিণ ধুবণী এলাকার একটি বাঁধ ভেঙে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিস্তার চরের রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় চরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পানিবন্দি পরিবার গুলো এখনো কোনো সরকারি সাহায্য পায়নি।
ডালিয়া ডিভিশনের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, উজানের ঢলে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। রাতের দিকে তিস্তার পানি কমতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানান, বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্র সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে তিস্তায় তৃতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে ভারত থেকে পানি দ্রুত বেগে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
এর আগে গত ১১ জুলাই তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে এবং ১৩ জুলাই সেটা সর্বোচ্চ ৯০ সেন্টিমিটার উপরে ওঠে। ১৫ জুলাই পর্যন্ত সেখানে বিপদসীমা বরাবর পানি প্রবাহিত হলেও ১২ জুলাই থেকে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পরে আবারও ২৪ জুলাই পর্যন্ত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেলে ভয়াভয় বন্যা দেখা দেয়। এত লালমনিরহাটে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
তিস্তা, ধরলার ও সানিয়াজানের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার পরিস্থির উন্নতি হলেও মঙ্গলবার বিকেল থেকে আবারও নতুন করে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে তিস্তা ও ধরলার পাড়ে। আবার বন্যা দেখা দেওয়ায় পরিবার গুলো স্থানীয় গাইডবাঁধ, স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ ও সড়কে আশ্রায় গিয়ে বসবাস করছেন। এতে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও ত্রাণ সংকট। লালমনিরহাট জেলায় আবারও ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পানিবন্দি রয়েছে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার, সানিয়াজান, ঠাংঝাড়া, পাকশের সুন্দর, বাঘের চর, সির্ন্দুরনা, পাঠান বাড়ি, হলদি বাড়ী, ডাউয়াবাড়ি,বিছন দই, গড্ডীমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, পাটিকাপাড়া, পশ্চিম হলদি বাড়ি, চর গড্ডীমারী, ধুবনী, সিঙ্গীমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর, চর বৈরাতী, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা, গোর্বধন, কুটির পার ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর প্রায় ৩০টি গ্রামের ২০ হাজার মানুষ। এসব এলাকায় তলিয়ে গেছে বসতবাড়ী, রাস্তাঘাট ও স্কুল-কলেজ। দুর্ভোগ বেড়েছে পানিবন্দি মানুষের।
হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহম্মেদ বলেন, সার্বক্ষণিক তিস্তাপাড়ের মানুষের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। বন্যার্ত পরিবারের পরিবারে মাঝে ত্রাণ সামগ্রী এলেই তা বিতরণ করা হবে।
লালমনিরহাটর জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসক প্রস্তুত রয়েছে। তবে বন্যার্ত পরিবার গুলোর জন্য এ পর্যন্ত ২৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন