ছোট যমুনা নদীর দুই তীরজুড়ে অবস্থিত শহর নওগাঁ। নওগাঁর প্রধান শহরটি পৌরসভার মধ্যে অবস্থিত। নওগাঁ পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও দীর্ঘদিন যাবত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে পৌরবাসী।
বর্তমানে পৌরসভার পালপাড়া-ঘোষপাড়া রাস্তাসহ অধিকাংশ জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর অবস্থা খুবই বেহাল। দীর্ঘদিন মেরামত কিংবা সংস্কার না করায় দুর্ভোগ দিন দিন চরম আকার ধারণ করছে। কিন্তু এই বেহাল রাস্তাগুলো নিয়ে কোনও পদক্ষেপ নেই পৌর কর্তৃপক্ষের।
জানা গেছে, ১৯৬৩ সালে স্থাপিত নওগাঁ পৌরসভা। ৩৮.৬৪বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত এই পৌরসভা। শহরের প্রধান সড়ক ছাড়া অধিকাংশ রাস্তাগুলোর বেহাল দশা। পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের সকল রাস্তাগুলো বছরের পর বছর সংস্কার কিংবা মেরামত না করায় বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। ওয়ার্ডের পালপাড়া ব্রিজের মোড় থেকে ঘোষপাড়া হয়ে শহরের মধ্যে আসার একমাত্র রাস্তাটির অবস্থা খুবই বেহাল ও বিপজ্জনক। রাস্তার অধিকাংশ স্থানের পিচ উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের।
শুকনো মৌসুমে তেমন কোনও সমস্যা না হলেও বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। এই ওয়ার্ডে বসবাসরত প্রায় ১০ হাজার মানুষদের চলাচলের জন্য একমাত্র এই রাস্তাটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়তই গর্তে ছোট-বড় যানবাহন উল্টে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
শুধু স্থানীয়রা নয় এই রাস্তা দিয়ে নওগাঁ শহরে আসার জন্য রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার মানুষরাও চলাচল করে।
এছাড়াও শহরের প্রধান অংশে অবস্থিত কাঁচাবাজার, চুড়িপট্টি, হাসপাতাল, ডাবপট্টি, সোনারপট্টি, শিবপুর, হলদিবাড়ি রাস্তাসহ পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তার অবস্থা খুবই নাজুক। বর্তমানে এই রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
আসন্ন দুর্গা উৎসবের আগেই এই রাস্তাগুলো আপাতত চলাচলের জন্য মেরামত করার দাবি পৌরবাসীর।
শহরের কালিতলা এলাকার বাসিন্দা প্রকাশ কুমার, রামুদা, আশিষ কুমার ঘোষসহ আরও অনেকেই বলেন, শহরের এই সব রাস্তা দেখে মনে হয় যে এখনও আমরা বর্বর ও আদিযুগে বসবাস করছি, যে যুগে রাস্তা-ঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন উন্নত ছিল না। কিন্তু একটি দেশের রাস্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ছাড়া সামগ্রিক উন্নয়ন কোনওভাবেই সম্ভব নয়।
তারা আরও বলেন, প্রথম শ্রেণির পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কোনও নজর নেই হিন্দু অধ্যুষিত এলাকার এই রাস্তার। আসন্ন পূজায় এই রাস্তা দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করবে কিন্তু রাস্তার যে বেহাল অবস্থা তাতে রাস্তার দুর্ভোগ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে আমরা আশঙ্কায় রয়েছি। যদি পূজার আগেই এই রাস্তাগুলো আপাতত চলাচলের জন্য মেরামত করা যেত তাহলে পথচারীসহ স্থানীয়রা একটু হলেও স্বস্তি পেত।
শুধু এই রাস্তাই নয় শহরের অন্যান্য অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তার অবস্থাও একই।
নওগাঁ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কমিশনার শেখ মোজাম্মেল হক মজনু বলেন, একজন কমিশনার হিসেবে আমি সব সময় আমার এলাকাকে আধুনিকায়ন করা চেষ্টা করেছি। কিন্তু সামগ্রিক উন্নয়ন, রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ অন্যান্য বড় ধরনের উন্নয়ন করা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। এই উন্নয়নগুলো সরকার ও পৌর মেয়রের সার্বিক সহযোগিতা নিয়েই করা সম্ভব। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে ও পৌরসভার সহযোগিতা নিয়ে রাস্তার যেসব স্থানের অবস্থা খুবই বেহাল সেই অংশগুলোতে আপাতত চলাচলের জন্য সংস্কার কাজ শুরু করেছি। আশা রাখি আসন্ন পূজায় এই পালপাড়া রাস্তা দিয়ে একটু হলেও স্বস্তিতে চলাচল করতে পারবেন পথচারী ও স্থানীয়রা। আগামীতে অবশ্যই এই রাস্তার দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার কাজের জন্য মেয়র সাহেবের সহযোগিতায় পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করব।
নওগাঁ পৌরসভা মেয়র নজমুল হক সনি বলেন, ইতোমধ্যে নগর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দুই ধাপের কাজ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে হাসপাতাল রাস্তার সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। বৃষ্টির কারণে কাজে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়াও পালপাড়া রাস্তাসহ অন্যান্য রাস্তার সংস্কার কাজের পরিকল্পনা উপর মহলে দেওয়া আছে। সরকার কর্তৃক অনুমোদন ও বরাদ্দ পেলেই পৌরসভার সকল বেহাল রাস্তার সংস্কার কাজ দ্রুত শুরু করা হবে।
তিনি বলেন, আরও কয়েকটি রাস্তার সংস্কার কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। ঠিকাদার চূড়ান্ত হলেই সেই সব রাস্তার কাজ শুরু করা হবে। আমি আশা রাখি কোনও বাধা না এলে আগামী এক বছরের মধ্যে পৌরসভার সকল রাস্তার আধুনিকায়নের কাজ শেষ হয়ে যাবে। তখন পৌরবাসীর চলাচলের জন্য রাস্তার আর তেমন কোনও সমস্যা হবে না।
বিডি প্রতিদিন/কালাম