১৮ অক্টোবর, ২০১৯ ১৮:৩৫

আটকের পর ৬৫ হাজার টাকায় ১০ জেলেকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:

আটকের পর ৬৫ হাজার টাকায় ১০ জেলেকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ

ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মৎস্য কর্মকর্তা সাথে থাকা আবশ্যক। কিন্তু মৎস্য কর্মকর্তাকে সাথে না নিয়ে, এমনকি ওসিকেও না জানিয়ে জাল-মাছ ধরে আদালতে চালান দেয়ার ভয় দেখিয়ে ১০ জেলের কাছ থেকে ৬৫ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থানার এএসআই দেলোয়ারের বিরুদ্ধে। 

শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে ওই উপজেলার চরএককুরিয়া সংলগ্ন লালখারাবাদ নদী থেকে ১০ জেলেকে আটকের পর পোলতাতলী ঘাটে তাদের কাছ থেকে ৬৫ হাজার টাকা নেয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিচারের দাবিতে মেহেন্দিগঞ্জের পোলতাতলী বাজারে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 

এদিকে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শিমুল রানী পাল এবং থানার ওসি আবিদুর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৫টায় চরএককুরিয়া সংলগ্ন লালখারাবাদ নদীতে পুলিশের অভিযানের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার ভোররাত থেকে চরএককুরিয়া সংলগ্ন নদীতে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাছ শিকার করছিলো স্থানীয়রা জেলেরা। ভোর ৫টার দিকে মেহেন্দিগঞ্জ থানার এএসআই দেলেয়ারের নেতৃত্বে দুটি মোটরসাইকেলযোগে ৪জন পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাছ শিকারের অভিযোগে জাল ও মাছসহ খোকন হাওলাদার (২০), বোরহান সরদার (১৯), কাওছার তফাদার (১৬), চাঁন মিয়া ২৫, আলাউদ্দিন (৫০) ও লালু ফকির (১৭) এবং ৪ বেদে জেলেসহ ১০জনকে আটক করে তারা। পে জাল ও মাছসহ তাদের নিয়ে যাওয়া হয় পোলতাতলী ঘাটে। সেখানে প্রত্যেক জেলেকে আদালতে চালান  (সোপর্দ) করার ভয় দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করে এএসআই দেলোয়ার। একই সাথে আটক জেলেদের পরিবারের সদস্যদের খবর দেয় পুলিশ। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় ব্যবসায়ী মনির হাওলাদার ও জামাল হোসেন রাড়ির মধ্যস্থতায় ৬৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ১০ জেলে ছেড়ে দিলেও জাল এবং মাছ নিয়ে যায় এএসআই দেলায়ার। ব্যবসায়ী মনির হাওলাদার এবং জামাল হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর থেকে এএসআই সিদ্দিক বিভিন্নভাবে জেলেদের কাছ থেকে চাঁদাবাজী করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এসব অভিযোগে সকালে পোলতাতলী বাজরে বিক্ষোভ করে স্থানীয়রা। তারা এএসআই দোলোয়ারকে চাঁদাবাজ আখ্যায়িত করে তার বিচার দাবি করেন। 

তবে মুঠোফোনে এএসআই দেলোয়ার বলেন, চরে এককুরিয়া কিংবা পোলতাতলী বাজারে তার কোন ডিউটিও ছিলো না। তিনি ওই এলাকায় যাননি। কাউকে আটক করেননি, কারোর কাছ থেকে টাকাও নেননি। তার বিরুদ্ধে মিথ্য অভিযোগ করা হয়েছে বলে দাবিবী করেন এএসআই দেলোয়ার।

মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শিমুল রানী পাল বলেন, মৎস্য কর্মকর্তা ছাড়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নদীতে মাছ শিকার বিরোধী কোন অভিযান চালাতে পারবে না বলে আইনে সু-স্পস্ট উল্লেখ রয়েছে। ভোরে মৎস্য বিভাগ চরএককুরিয়া সংলগ্ন লালখাড়াবাদ নদীতে কোন অভিযান করেনি। কোন বাহিনী সেখানে অভিযান চালালে তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে। মৎস্য বিভাগ এ সম্পর্কে অবহিত নয়। 

মেহেন্দিগঞ্জ থানার ওসি আবিদুর রহমান বলেন, শুক্রবার ভোরে লালখাড়াবাদ নদীতে থানা পুলিশ কোন অভিযান চালায়নি। ওই এলাকায় অভিযানের বিষয়ে তাকে কেউ অবহিতও করেনি। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন ওসি।

বরিশালের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মা ইলিশ রক্ষার নামে কেউ অপরাধে জড়িয়ে পড়লে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ডিমওয়ালা মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে গত ৯ অক্টোবর মধ্য রাত থেকে আগামী ৩০ অক্টোবর মধ্য রাত পর্যন্ত ২২ দিন দেশের ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার নদীতে সব ধরনের মাধ শিকার, সংরক্ষন, পরিবহন ও বিক্রি আইননত দণ্ডনীয়।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর