পণ্য খালাসে নিয়োজিত শ্রমিকদের খাবার পানি, টয়লেট ও বিশ্রামের কোনো ধরনের ব্যবস্থা না থাকায় মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ খালাস তিন ঘণ্টা বন্ধ ছিল। টেকনাফ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নানানমূখি হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মিয়ানমার থেকে আসা আরও ১৫টি ট্রলারে ৩০হাজার বস্তার (প্রতিবস্থায় গড়ে ৪০কেজি) পেঁয়াজ নাফনদীর জেটিতে ভাসমান রয়েছে।
তবে স্থলবন্দর কতৃপক্ষ বলছেন, বন্দরের প্রধান ফটকের সামনে থেকে যানজট নিরসনের লক্ষ্য উপজেলা প্রশাসন ২০টি অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করেছেন। ওইসব দোকান থেকে শ্রমিকেরা খাবার খেতেন। তারা খাবার খেতে না পারায় কিছুক্ষণ কাজ বন্ধ করে দেন। পরে তারা পণ্য খালাসের কাজ শুরু করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আবুল মনসুর বলেন, বুধবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থলবন্দরের প্রধান ফটক এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমিতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ২০টি দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়েছে।পন্যবাহী ট্রাক স্থলবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় প্রতিনিয়ত ওই এলাকায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছিল।
এদিকে, বৃহস্পতিবার একদিনের সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ ১ হাজার ৮১৬ মেট্রিক টন পেঁয়াজ খালাস করা হয়েছে। এর আগে গত ৪ নভেম্বর এসেছিল ১ হাজার ৫৮০ মেট্রিকটন পেঁয়াজ। এই নিয়ে ভারত রপ্তানি বন্ধের পর ৩৩ দফায় ২৮ হাজার ৮৬৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। এই তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা আবছার উদ্দিন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পঁচনশীল এ পণ্য ট্রলার থেকে খালাসে বিলম্ব হলে গরমে নষ্ট হয়। বন্দরে নোঙ্গর করার দুই-তিনদিন পেরিয়ে গেলেও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ পণ্য খালাসে ধীর গতির কারণে ট্রলার থেকে পেঁয়াজ খালাস করা যাচ্ছে না। তার উপর পণ্য খালাসে নিয়োজিত শ্রমিকদের স্থলবন্দরে খাবার পানি, টয়লেট ও বিশ্রামের কোনো ধরনের ব্যবস্থা না থাকায় মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজ খালাস বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রায় তিন ঘন্টা বন্ধ ছিল। এতে করে ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজ সরবরাহ করতে পারেনি।
ব্যবসায়ী জানান, নাফনদীতে নোঙ্গর করা ট্রলার জট ও খালাস ধীরগতির থেকে কারণে ট্রলারে পেঁয়াজ পঁচন ধরেছে। এছাড়া খালাসের অপেক্ষায় বন্দরে আরও ১৫টি পেঁয়াজ বোঝাই ট্রলার নোঙ্গর করে রয়েছে জেটিতে। খালাসে বিলম্ব হওয়ায় শত শত বস্তা পেঁয়াজ ট্রলারেই পঁচন ধরেছে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এর ফলে যেকোনো সময় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
স্থলবন্দরের শুল্ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পেঁয়াজের দাম বাড়ার পর গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করা হয়। এরমধ্যে সেপ্টেম্বর মাসের ৩ হাজার ৫৭৩ দশমিক ১৪১ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। যার আমদানিমূল্য ১৫ কোটি কোটি ৫৫ লাখ লাখ টাকা। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পর মিয়ানমার থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে ৩ হাজার ৫৭৩ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়।
অক্টোবর মাসে ২ হাজার ৮৪৩ মেট্রিকট্রন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল। যার আমদানিমূল্য ৯০ কোটি ৭২ লাখ ১২ হাজার ৫৫১ টাকা।
চলতি মাসের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ৩১ হাজার ৮৭৫ মেট্রিন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক বলেন, স্থলবন্দরে মালামাল উঠা-নামার কাজে প্রায় চারশতাধিক শ্রমিক রয়েছে। তাদের জন্য বন্দর কতৃপক্ষ খাবার পানি, টয়লেট ও বিশ্রামের কোনো ধরনের ব্যবস্থা না থাকায় পণ্য খালাস বন্ধ করা হয়েছিল। দুই-একদিনের মধ্যে এসবের ব্যবস্থা না করলে পণ্য খালাস কাজ সম্পূণ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
পেঁয়াজ আমদানিকারকরা বলেন, ট্রলার থেকে খালাসের বিলম্ব হওয়াই বস্তা বস্তা পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব পেঁয়াজ এখন বাচাই করতে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। এভাবে চললে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করবে না। তারা আরও বলেন, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, পণ্য খালাসে নিয়োজিত শ্রমিকদের খাবার পানি, টয়লেট ও বিশ্রামের কোনো ধরনের ব্যবস্থা না থাকায় মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজ খালাস তিন ঘণ্টা বন্ধ ছিল। কাঁচাপণ্য হিসেবে যত দ্রুত খালাস করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। এরফলে শত শত বস্তা পেঁয়াজ ট্রলারে পঁচন ধরার শঙ্কা রয়েছে। এতে লোকসান গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের।
স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফে মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন বলেন, স্থলবন্দরের ভেতরে শুকনা খাবারের একটি ক্যান্টিন রয়েছে। সেখানে ভাত ছাড়া যাবতীয় খাবার পাওয়া যায় পাশাপাশি শ্রমিকদের জন্য টয়লেটের ব্যবস্থাও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমানের। স্থানীয় প্রশাসন যানজট নিরসনের জন্য স্থলবন্দরের প্রধান ফটক থেকে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করলে এতে স্থলবন্দর কতৃপক্ষের দোষ কি!
তিনি আরও বলেন, ট্রলার নোঙ্গর করে আমদানির ঘোষণাপত্র (আইজিএম) জমা না দেওয়ায় খালাসে বিলম্ব হতে পারে। তবে পেঁয়াজ খালাসের জন্য রাত-দিন অতিরিক্ত শ্রমিক কাজ করছেন। এরমধ্যেও রাত আটটা পর্যন্ত বন্দর থেকে ৮৭টি ট্রাক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ