৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৪:০৩

যশোরে দেশের প্রথম ‘মিত্র ও মুক্তিবাহিনী স্মৃতিস্তম্ভ’

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর:

যশোরে দেশের প্রথম ‘মিত্র ও মুক্তিবাহিনী স্মৃতিস্তম্ভ’

স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি মিত্রবাহিনী ভারতীয় সাত সেনার আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখতে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরায় নির্মিত হচ্ছে স্মৃতিস্তম্ভ। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৩০ লাখ টাকার এ স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজ এখন শেষ পর্যায়ে। 

বিজয়ের মাস এই ডিসেম্বরেই এটির উদ্বোধন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশে প্রথমবারের মতো নির্মিত এ ধরণের স্মৃতিস্তম্ভ স্বাধীনতা যুদ্ধে মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের আত্মত্যাগ ও বীরত্বগাথার কথা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। 

একাত্তরে জেলা হিসেবে প্রথম শত্রুমুক্ত হয় যশোর। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে এ জেলার যশোর-ঢাকা রোডের খাজুরা বাজার ছিল রাজাকারদের অভয়ারণ্য। পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের সমন্বয়ে খাজুরা এনএম মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তারা স্থাপন করেছিল রাজাকার ক্যাম্প। 

‘দ্বিতীয় টিক্কা খান’ হিসেবে পরিচিত ডা. ইব্রাহিম ছিলেন এই রাজাকার ক্যাম্পের নেতৃত্বে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, রাজাকার কমান্ডার ডা. ইব্রাহিমের নেতৃত্বে এ ক্যাম্প থেকেই পুরো খাজুরা অঞ্চলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়। খাজুরার বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ধরে এনে এ ক্যাম্পে নির্মম নির্যাতন চালানো হতো। ক্যাম্পের পেছনে চিত্রা নদীর পাড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দিত রাজাকাররা। 

একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর যশোর হানাদার মুক্ত হওয়ার আগেই নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরেছিল রাজাকার ও খান সেনারা। সে কারণে ৬ ডিসেম্বরের আগেই তারা জেলার বিভিন্ন ক্যাম্প ত্যাগ করতে শুরু করে। ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত করে মিত্র ও মুক্তি বাহিনী পাক সেনাদের পিছু নিয়ে যশোর-ঢাকা রোড ধরে খাজুরার দিকে যায়। খাজুরায় রাজাকার ডা. ইব্রাহিমের বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ হয় মিত্র ও মুক্তি বাহিনীর সদস্যের।

খাজুরার শহীদ মিত্র ও মুক্তিবাহিনী স্মৃতি পরিষদের সেক্রেটারি মশিয়ার রহমান বলেন, ‘আমার বড় ভাই মুক্তিযুদ্ধে সংগঠক ছিলেন। পরিবারের সবাই কম-বেশি মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন। রাজাকার ক্যাম্পের কাছে বাড়ি হওয়ায় রাজাকারদের নির্যাতনের চিত্র নিজের চোখে দেখেছি। বিজয়ে দ্বারপ্রান্তে এসে খাজুরায় মিত্র বাহিনীর সদস্যদের আত্মত্যাগ আমাকে সবসময় নাড়া দিত। সে কারণেই নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ‘শহীদ মিত্র ও মুক্তিবাহিনী স্মৃতি পরিষদ’ গঠন করি’। 

মশিয়ার রহমান বলেন, স্মৃতি পরিষদ করার পর সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে আবেদন করি একটি স্মৃতি স্মম্ভ নির্মাণের জন্য। শেখ হাসিনার গত সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। এরপরই সরকার এ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। খাজুরা এনএম মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দেওয়া পাঁচ শতক জমিতে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে এ স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করছে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়। এর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিজয়ের মাস চলতি ডিসেম্বরেই এর উদ্বোধন করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর