দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। এ বন্দরের রাজস্ব ঘাটতি দিনদিন বেড়েই চলছে। ভারতের পেট্রাপোলের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বন্দর-কাস্টমসের বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক কর্মকতাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে সপ্তাহে সাতদিনে ২৪ ঘণ্টা বাণিজ্য সেবা। এতে সরকারের যেমন রাজস্ব আয়ে ভাটা পড়েছে, তেমনি লোকসান গুণছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিছু অসৎ ব্যবসায়ীরা আমদানিকৃত পণ্যের শুল্ক ফাঁকি দিতে না পেরে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনারের নামে বিভিন্ন জায়গায় বেনামী অভিযোগ দিয়ে একের পর এক তাকে হয়রানি করছে। এ কারণে এ বন্দর দিয়ে বাণিজ্যিক আমদানি কারকরা হয়রানির ভয়ে পণ্য আমদানি করছে না।
বৈধ সুবিধা দেওয়া ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। আর প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলছেন, অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে তারা সমন্বয় করে কাজ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানাযায়, বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা।লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা। এসময় ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ২৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই- ডিসেম্বর) বেনাপোল কাস্টম হাউসে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। এ সময় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাই মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৫৩ কোটি ৮০ লাখ, আগস্ট মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০৬ কোটি ২৯ লাখ, সেপ্টেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০৫ কোটি ১০ লাখ, অক্টোবর মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২৮ কোটি ৩১ লাখ, নভেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা, ডিসেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮৪ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা। এর বিপরীতে গত ছয় মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি ১ হাজার ৩৬৫কোটি টাকা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, সব বন্দরে আমদানি পণ্যের উপর রাজস্ব পরিশোধের নিয়ম এক হতে হবে। বন্দরের ধারণ ক্ষমতা ৩৮ হাজার মেট্রিক টন, কিন্তু এখানে সব সময় পণ্য থাকে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন। জায়গার অভাবে পণ্য খালাস করতে না পেরে ভারতীয় ট্রাক বন্দরে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকছে। খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে মূল্যবান পণ্য সামগ্রী পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বৈধ সুবিধা পেলে এ বন্দর থেকে বর্তমানে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পাচ্ছে তখন তার দ্বিগুণ আয় হবে।
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের জয়েন্ট কমিশনার শহীদুল ইসলাম জানান, পণ্য চালান খালাসে পূর্বের চেয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বেড়েছে কাস্টমসে। শুল্কফাঁকি বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করায় কিছু ব্যবসায়ী এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়েছেন। বিশেষ করে রাজস্ব বেশি আসে এমন পণ্য চালান কম আমদানি হচ্ছে। এতে রাজস্ব কিছুটা ঘাটতি হয়েছে। তবে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন তা পূরণের। শুল্কফাঁকি সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। ব্যবসায়ীদের বৈধ সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে তারা আন্তরিক হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) প্রদোষ কান্তি দাস জানান, তিনি বন্দরে দায়িত্ব নেওয়ার আগে অবশ্য কিছুটা অব্যবস্থাপনা ছিল। তিনি যোগদানের পর বন্দরে অবৈধ প্রবেশ নিষেধ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছেন। বাণিজ্যে গতিশীলতা ফেরাতে ইতিমধ্যে স্বল্প পরিসরে অটোমেশন প্রক্রিয়ায় কাজ শুরু হয়েছে। সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও আরো কিছু জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া আরও কিছু প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে উপর মহলকে অবহিত করা হয়েছে। এসব কাজ সমাপ্ত হলে বেনাপোল বন্দরে বাণিজ্যে আরো গতিশীলতা বাড়বে বলে জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা