বঙ্গোপসাগরে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের দুবলাচরসহ পাঁচটি চরে জেলে পল্লীর চলতি শুঁটকি মাছ আহরণ মৌসুমেও জেলেদের মুখে হাসি নেই। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, একের পর এক বৃষ্টি, শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে সাগরে প্রয়োজনীয় মাছ পাচ্ছেনা জেলেরা, অন্যদিকে রোদ না থাকায় আহরিত মাছও শুকানো যাচ্ছে না। শুঁটকি আহরণ মৌসুমের তিন মাস অতিবাহিত হলেও জেলে, মহাজন (বহদ্দর) ও শুঁটকি ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। তবে আগামী দুমাস আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা কমিয়ে আনতে পারবে বলে আশা করছে শুঁটকি পল্লীর জেলে ও সুন্দরবন বিভাগ।
সুন্দরবনের উপকূল দুবলার চরে প্রতি বছর অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে শুঁটকি আহরণ। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ থেকে নির্ধারিত রাজস্ব পরিশোধ করে পাস-পারমিট নিতে ডিপো মালিক, মহাজনসহ প্রায় ১০ হাজার জেলে শুঁটকি তৈরীর জন্য সাগর পাড়ে মাছ আহরণ করেন। এ বছর সুন্দরবনের দুবলারচরসহ পাঁচটি চরে ৫৩টি ডিপো মালিক, এক হাজার ৪০টি অস্থায়ী ঘর তুলে জেলে শুঁটকির জন্য মাছ আহরণ করছেন। এবার ১০ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে শুঁটকি পল্লী লন্ডভন্ড হয়ে যায়।
নষ্ট হয়েছে কয়েক কোটি টাকার আহরিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এছাড়াও ডিসেম্বরের শেষের দিকে কয়েক দফা শৈত্য প্রবাহের কারণে প্রচন্ড ঠান্ডার সঙ্গে বৃষ্টি আর তীব্র কুয়াশার কারণে শুঁটকি পল্লীর জেলেরা সাগর থেকে প্রয়োজনীয় মাছ পাচ্ছেননা। আবার রোদ না থাকায় আহরিত মাছও তারা শুকাতে পারছের না। এ অবস্থায় শুঁটকি পল্লীর মহাজন ও জেলেদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
সুন্দরবনের দুবলাচরের মহাজন পঙ্কজ রায় বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর থেকে সাগরে তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া প্রচন্ড শীতের সঙ্গে আছে মাঝে মাঝে বৃষ্টি। সাগরে মাছ মিলছেনা, ঘন কুয়াশার কারণে মাছও শুকানো যাচ্ছেনা। ফলে উৎপাদন কমে যাবার কারণে আমাদের পুঁজি এবার ওঠবে না। জেলে কামরুল ইসলাম বলেন, এবার বিরূপ আবহাওয়ার কারণে মাছের উৎপাদন কম। যে মাছ পাচ্ছি তার আকার-আকৃতিও ছোট। এসব মাছ আবার বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশার কারণে শুকানো যাচ্ছেনা। তাই জেলেদের মনে আনন্দ নেই। কারণ আপনজন ছেড়ে প্রায় ছয় মাসের জন্য সাগরে কাজ করে যদি খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হলে, এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু নেই।
দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতি বছর শুঁটকি মৌসুমে জেলেদের একটি লক্ষমাত্রা থাকে। এ বছর জেলেদের লক্ষমাত্রা কোনভাবেই পূরণ হবে না। তবে মৌসুমের বাকি দিনগুলোতে যদি আবহাওয়া ভাল থাকে এবং মাছ বেশি পাওয়া যায়, তাহলে ক্ষয়ক্ষতি কিছু কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, দুবলাচরে পাঁচটি শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ পল্লী রয়েছে। এ বছর সাগরে প্রচুর মাছ পাওয়া গেলে জেলেদের টার্গেটেরও বেশি শুঁটকি তৈরি করতে পারবে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, শীত এবং বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশার কারণে জেলেরা গত বছরের চেয়ে এবার মাছ কম পাচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন