১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ১৭:৩১

দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে শত্রুজিৎপুর কলেজের অধ্যক্ষ বরখাস্ত

মাগুরা প্রতিনিধি

দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে শত্রুজিৎপুর কলেজের অধ্যক্ষ বরখাস্ত

বহিষ্কার শত্রুজিৎপুর কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুল ইসলাম

দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার নানা অভিযোগে মাগুরার সদর উপজেলার শত্রুজিৎপুর কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কলেজ ব্যবস্থাপনা পর্ষদ। এছাড়া তার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত ডিসেম্বর থেকে বেতন-ভাতাদি বন্ধ রয়েছে। এরই আলোকে গত শনিবার বিকালে কলেজের ব্যবস্থাপনা পর্ষদ জরুরি মিটিংয়ে তাকে সাময়িক বরখাস্তের এ সিদ্ধান্ত নেন। 

সোমবার সকালে কমিটির সভাপতি শত্রুজিৎপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সঞ্জিত কুমার বিশ্বাস জানান, শনিবারের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সভায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে উপস্থাপিত অভিযোগগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়, কলেজের জমি ক্রয়ে অর্থ আত্মসাৎ, কলেজে কোচিং বাণিজ্যের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন, ছাত্র-ছাত্রীর উপ-বৃত্তির টাকার বিপরীতে উৎকোচ গ্রহণ, কম্পিউটার সমৃদ্ধ আইসিটি কক্ষে শিক্ষার্থী এমনকি শিক্ষকদের প্রবেশাধিকার না দেয়া, ৪তলা বিশিষ্ট আধুনিক সুযোগ সুবিধাসহ ক্লাসরুমে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস করতে না দিয়ে পুরাতন ভবনে গরমের মধ্যে ক্লাস করতে বাধ্য করা, কলেজে কোন শিক্ষা সফর, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রিড়া অনুষ্ঠান না করেও তার বিপরীতে বিল ভাউচার জমা দিয়ে টাকা উত্তোলন, একাধিক বিষয়ে ফেল করা ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট থেকে টাকার বিনিময়ে ফরম পূরণের সুযোগ করে দেয়া, কলেজের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি কলেজে সংরক্ষিত না রাখা। তিনি তার কর্ম সময়ে নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন সময়ে অন্তত দেড় কোটি টাকা অবৈধভাবে তসরুপ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এই ধরনের অন্তত ৪৬টি অভিযোগে মাগুরার ওই কলেজের ১৪ জন শিক্ষক গত ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর মাগুরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। যার তদন্ত ও পরবর্তী দাপ্তরিক পদক্ষেপে গত ডিসেম্বরে মাহবুবুল ইসলামের বেতন-ভাতা মন্ত্রণালয় থেকে বন্ধ হয়। অন্যদিকে, দুর্নীতিপরায়ন এই অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিভিন্ন পর্যায়ে দাবি তুলতে থাকেন। এই দাবির প্রেক্ষিতে শনিবার বিকালে কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে বসে তাকে সাময়িক বাহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন।

কলেজের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক রতন বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অর্থ আত্মসাতের বিষয় উত্থাপিত হয়েছে। যে বিষয়গুলো তদন্তে বিভিন্ন সময়ে তিনি প্রায় দেড় কোটি টাকার অধিক আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে। 

কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মতিয়ার রহমানের মেয়ে সুফিয়া খাতুন জানান, ডিগ্রি ক্লাসের অনুমোদন না থাকলেও সেখানে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে এইচএসসি ক্লাসের সাথে সমন্বয়ের কথা বলে অধ্যক্ষ ৬ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু সমন্বয়ের জন্য যথাযথ কোন আবেদন করেননি।

কলেজের দাতা সদস্য সামছুদ্দিন মোল্যা বলেন, ‘অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় তার বেতন-ভাতাদি বন্ধ রয়েছে। এ ব্যাপারে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সকল সদস্য তাকে সাময়িকভাবে বাহিষ্কারের ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। কিন্তু পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শত্রুজিৎপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সঞ্জিত কুমার বিশ্বাস তাকে বহিষ্কার না করে ‘প্রয়োজনে আমি পদত্যাগ করবো’ এমন মন্তব্য করায় শিক্ষক ও এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, অধ্যক্ষ মাহবুবুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো করেছে তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কলেজের শিক্ষার মান ধরে রাখার জন্য শিক্ষকদের বিভিন্ন সময় চাপে রাখার কারণে আমার বিরুদ্ধে এ ষড়যন্ত্র করা হয়েছে’।

বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর