জান্নাতুল ফেরদৌস টুম্পা। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার খলিশাডাঙ্গা ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী এবং মেরিগাছা গ্রামের আব্দুর রহিমের মেয়ে। টুম্পা ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় পাঁচবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করে। বিচারক হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। সংসারের আর্থিক সংকটের কারণে স্থানীয় রেস্তোরাঁয় কাজ শুরু করেছে টুম্পা। এতে কলেজে অনিয়মিত হয়ে পড়েছে মেধাবী এ শিক্ষার্থী।
টুম্পার বাবা আব্দুর রহিম জানান, দুই মেয়ে আর এক ছেলের মধ্যে টুম্পা বড়। ছোট মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলেটার বয়স চার মাস। ভ্যানগাড়ী চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে আগের মতো আর কাজ করতে পারেন না। এতদিন অন্যের জায়গায় বাড়ি করে বসবাস করে আসছিলেন। সম্প্রতি বাড়ি করার জন্য ৪ শতাংশ জমি কিনেন। জমি কিনতে গিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে ঋণ নিয়ে তার কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে ঋণের কিস্তি আর সংসার চালাতে পারছিলেন না। ছেলে-মেয়ের পড়ার খরচ তো দুঃস্বপ্ন। তাই মেয়েকেও কাজ করতে হচ্ছে। তার আয় থেকে ঋণের কিস্তি দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মেয়ের পড়ার অনেক ইচ্ছে, তাই রাতে রাতে বাড়িতে পড়ে। আমিও চেষ্টা করছি। ঋণ শোধ তরতে পারলে আবার মেয়েকে কলেজে পাঠাবো।
রেস্তোরাঁর মালিক মহাসিন জানান, প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে কাজ করে টুম্পা। দৈনিক মজুরি দেওয়া হয় ১৫০ টাকা। মেয়েটা মেধাবী। বিত্তবানরা সহযোগিতায় এগিয়ে আসলে মেয়েটা পড়াশুনা করতে পারত।
টুম্পা জানায়, প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা কাজ করে, রাতে দুই ঘন্টা করে পড়াশুনা করে। বান্ধবীরা সহযোগিতা করে। বান্ধবীদের নিকট থেকে বই-নোট নিয়ে পড়াশুনা করে।
নাটোরের এই মেধাবী শিক্ষার্থী আরও জানান, স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে জজ হব। এখন অসুস্থ বাবার মাথায় ঋণের বোঝা। তাই আমার সেই স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে।
টুম্পার বান্ধবী শিমলা ও শান্তা বলেন, আমরা একসাথে ক্লাশে যেতাম। টুম্পার বাবা পড়া-লেখার খরচ দিতে না পারায় সে রেস্তারাঁয় কাজ নিয়েছে।
খলিশাডাঙ্গা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আনম ফরিদুজ্জামান বলেন, মেয়েটি অনেক মেধাবী, নিয়মিত ক্লাশ করত। কিছুদিন যাবত ক্লাশে অনুপস্থিত। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম মেয়েটি রেস্তোরাঁয় কাজ করে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা