১ এপ্রিল, ২০২০ ১৬:১৮

কুমিল্লায় নিম্নবিত্তের টিসিবির পণ্য কিনছে ব্যবসায়ী ও উচ্চবিত্তরা!

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

কুমিল্লায় নিম্নবিত্তের টিসিবির পণ্য কিনছে ব্যবসায়ী ও উচ্চবিত্তরা!

কুমিল্লায় লাইন ধরে নিম্নবিত্তের সাশ্রয়ী দামের টিসিবির (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) পণ্য কিনছেন ব্যবসায়ী ও উচ্চবিত্তরা! টিসিবির দোকানগুলোতে ব্যবসায়ী ও উচ্চবিত্তদের ভিড় একটি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বেশীরভাগ টিসিবির দোকানের সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যা্চ্ছে মুদি দোকানি ও উচ্চবিত্তদের। অথচ নিম্নআয়ের মানুষ কিংবা মধ্যবিত্তদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের নিত্য প্রয়োজনীয় বিক্রির বিষয় অনেকে জানে না।

নিউমার্কেটের এক মুদি দোকানি নিউমার্কেটে টিসিবির পণ্যের দোকানে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে এসেছেন। তার সাথে তার দোকানের বিক্রয়কর্মীসহ চারজন বন্ধু নিয়ে এসেছেন। দুই বার করে লাইনে দাঁড়াবেন। টিসিবির পাঁচ লিটার তেল ৪শ টাকা। এমন পাঁচ লিটারের ১০টি কন্টিনার কিনতে পারলে এক হাজার টাকা লাভ হবে। টিসিবি থেকে কেনা তেল নিজের দোকানে নিয়ে বিক্রির ভাবনায় গত কয়েক দিন ধরে তিনি টিসিবির লাইনে এসে দাঁড়ান।

বুধবার সদর হাসপাতাল সড়কের কাছে টিসিবির পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এ সময় কালো রঙের একটি প্রাইভেটকার এসে থামলো। গাড়ি থেকে একজন গৃহিনী নেমে পড়লেন। লাইনে দাঁড়িয়ে পাঁচ লিটার তেল, ২ কেজি পিয়াজ, ১ এক কেজি ডাল নিলেন। একই লাইনে ঘরের গৃহকর্মীকেও দাঁড় করালেন। পরিচয় গোপন রেখে কথা বলতে চাইলে ওই গৃহবধূ জানান, তার স্বামী ব্যবসায়ী। বাড়ি নগরীর দ্বিতীয় মুরাদপুরে। বেশী করে টিসিবির পণ্য কিনবেন বলে বাসার গৃহকর্মীকেও সাথে নিয়ে এসেছেন তিনি। 

ডিসি অফিসের সামনে টিসিবির ডিলার সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী বিক্রি করছিলো। মুখে মাস্ক লাগিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছেন বেশ কয়েকজন কিশোরী। 

কথা বলে জানা যায়, তাদের বাসার মালিক টাকা দিয়ে পাঠিয়েছে। তারা লাইনে দাঁড়ালে মানুষে হাসাহাসি করবে। তাই কাজের লোক পাঠিয়েছে টিসিবির থেকে পণ্য কিনতে।

টিসিবির ডিলার আব্বাস উদ্দিন জানান, উচ্চবিত্ত নিম্নবিত্ত দেখার সুযোগ নেই। লাইনে দাঁড়িয়ে কেউ টাকা দিয়ে পণ্য নিলেতো আমরা না করতে পারি না।  

এদিকে নিম্ন আয়ের ও মধ্যবিত্ত অধ্যুষিত নগরীর জনবহুল এলাকাগুলো হচ্ছে দ্বিতীয় মুরাদপুর, দক্ষিণচর্থা,ধর্মপুর রেইলগেইট, তেলিকোনা, শুভপুর, চাঁনপুর, শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ড, মহাজনবাড়ি ও গোবিন্দপুর। ওইসব এলাকায় টিসিবির গাড়ি পৌঁছায় না। ওইসব এলাকার লোকরা জানেন না টিসিবি সাশ্রয়ী দামে পণ্য বিক্রি করছে। এছাড়া প্রতি উপজেলায় একটি টিসিবির দোকানে পণ্য বিক্রি করে যা চাহিদার তুলনায় একেবারে অপ্রতুল। 

অপরদিকে দোকান কম হওয়ায় মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।

সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু জানান, টিসিবির পণ্য উচ্চবিত্তদের জন্য না। আর নগরীর যেসব স্থানে নিম্নআয়ের অনেক মানুষের বসবাস সেখানে টিসিবির গাড়ি পৌঁছায় না। সরকার যে উদ্দেশ্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য টিসিবির পণ্য বিক্রির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে পরিকল্পনার অভাবে তা ভেস্তে যাচ্ছে। 

নগরীর মূল সড়কের পাশে টিসিবির পণ্য বিক্রয় করার কারণে নগরের নিম্নআয়ের মানুষের কাছে টিসিবির পণ্য পৌঁছায় না। বিষয়টি নিয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর বলেন, টিসিবির পণ্য যেন নগরীর নিম্নআয় অধ্যুষিত এলাকায় পৌঁছায় তা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।  

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর