এবার বৈসাবিতে উৎসবের রঙ লাগেনি পাহাড়ে। করোনা আতঙ্কে স্তব্ধ পুরো পাহাড়। অজানা শঙ্কায় বাতিল সব আনন্দ উল্লাস। তাই উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেনি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা। নেই নুপুরের ছন্দ। বাতাসেও ভাসছে না গানের সুর।
অথচ গেল বছরের এদিনে উৎসবের নগরী ছিল তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। কিন্তু এখন একেবারেই ভিন্ন চিত্র। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ এড়াতে বাতিল করা হয়েছে পার্বত্যাঞ্চলের বৈসাবি উৎসব।
জানা গেছে, বাংলাদেশে শুধু পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা ভিন্নভাবে পালন করে বর্ষবরণ উৎসব। নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে ত্রিপুরারা বৈসু, মারমারা-সাংগ্রাই ও চাকমারা-বিজু নামে পালন করে এ উৎসবকে। তাদের বৈসু-সাংগ্রাই-বিজু এই তিন নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে উৎপত্তি হয়েছে ‘বৈসাবি’ নামের। এ বৈসাবি উৎসবের মধ্যেদিয়ে পুরনো বছরের কালিমা আর জীর্ণতাকে ধুয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা। সাধারণত বছরের শেষ দুইদিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিন বর্ষবরণ উৎসব বৈসাবি পালিত হয় রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান, পার্বত্য জেলায়। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বিশ্বাস, চৈত্র মাস এলেই একটি পাখি এসে বিজু বলে ডাক দিয়ে যায়। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা এ পাখিকে বিজু পেক্কো (বিজু পাখি) বলে।
তাদের ধারণা এ পাখির সুমধুর কলতান বৈসাবি উৎসবের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে। শুরু হয়ে যায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বৈসাবির প্রস্তুতি। পার্বত্যাঞ্চলের চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরারা ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে পালন করে থাকে এ বৈসাবি উৎসব। কিন্তু এবার করোনাভাইরাস বেস্তে দিয়েছে বৈসাবির সব আয়োজন। তিন পাহাড়ে বসবে না ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মেলা।
সামাজিক নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত করতে ও করোনা সংক্রমণ রোধ করতে মানুষকে ঘরে রাখতে নেওয়া হয়েছে এ সিদ্ধান্ত বলে জানান রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ছাদেক আহমেদ।
তিনি বলেন, পরিবেশ পরিস্থিতি ঠিক থাকলে হয়তো পাহাড়ে প্রতিবছরের মত বৈসাবি উৎসব পালিত হতো। কিন্তু এবার পরিবেশ পরিস্থিতি মানুষের নাগালের বাইরে। কেউ করোনা থেকে নিরাপদ নয়। মানুষকে নিরাপদ রাখতে পাহাড়ের সব উৎসব বাতিল করা হয়েছে। মানুষ চেঁচে থাকলে উৎসব অনেক হবে। কিন্তু পাহাড়ে করোনা ছড়িয়ে পড়লে তার মোকাবেলা করা সম্ভব না।
তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বসবাসরত ১০ ভাষাভাষি ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এ বৈসাবি উৎসব পালন করে থাকে। আয়োজন করা হয়, নাচ, গান ও মেলার। এ উৎসবে শুধু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা নয়, মেতে উঠে বিভিন্ন ধর্ম বর্ণের মানুষ। এসময় পাহাড়ে অন্যরকম বৈসাবি উৎসব দেখতে ছুঠে আসে দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক। সবমিলে বৈসাবিকে ঘিরে উৎসবমুখর হয়ে ওঠেছে এ পাহাড়ি জনপদ। কিন্তু এবার উৎসব নয় করোনার বিরুদ্ধে সচেতনতায় সৃষ্টি করতে ঐক্যবদ্ধ পাহাড়ের মানুষ।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন