কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বোরো ধান ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়ায় কৃষকের স্বপ্ন পুড়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে কৃষকের ফসল পুড়ে নষ্ট হবার উপক্রম। কৃষি বিভাগের পরামর্শে বালাই নাশক প্রয়োগ করেও কোনো প্রকার প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও হাল না ছেড়ে দিনভর কৃষকরা ব্যস্ত থাকছেন ফসলি ক্ষেত রক্ষার কাজে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে লাকসামে ৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। সামান্য কিছু জায়গা ছাড়া সব এলাকাতেই বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার কান্দিরপাড় ও মুদাফরগন্জ ইউনিয়ন এলাকায় এই রোগের সংক্রমন কিছুটা বেশি। এতে কয়েকজন কৃষকের স্বপ্ন পুড়েছে। তার প্রত্যাশানুযায়ী ফলন না পাওয়ার দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
কান্দিরপাড় ইউনিয়নের বোরো চাষী আজগর, শাহাজান, আউয়াল, মঞ্জুর আলম জানান, কিছু কিছু বোরো ধান ক্ষেত ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ধানের শীষগুলো আস্তে আস্তে সাদা হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। শীষের গোড়ায় প্রথমে এ রোগ দেখা দিচ্ছে। পরে আস্তে আস্তে পুরো শীষকে গ্রাস করছে। শীষের ধানগুলো চিটা হয়ে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগ পরামর্শ দিচ্ছে। কিন্তু স্প্রে করে কোনও কাজ হচ্ছে না। বিশেষ করে ২৮ জাতের ধানে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে।
অপরদিকে কৃষক এমরান, খোকন, আবদুল রশিদ জানান, এ রোগের আক্রমণে উৎপাদন কমে যাবে। কোন কোন ক্ষেতের ধান সব চিটা হয়ে যাচ্ছে। ধানের ফলন না পেলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। আমাদের মারাত্মক বিপাকে পড়তে হবে।
হতদরিদ্র কৃষক আলী মিয়া বলেন, ‘আমি সাড়ে ৩ বিঘা বর্গা নেওয়া জমিতে বোরো চাষ করছি। এখন পুরো ধান ক্ষেতে এমন রোগে ধরছে, সন্ধ্যায় রেখে যাই এক রকম আর সকালে এসে দেখি আরেক রকম। দিন দিন সব ধানের শীষ শুকিয়ে যাচ্ছে। একদিকে সেলোমেশিনের খরচ অন্যদিকে মহাজনের জমি বাবদ ধান। কোনটা কিভাবে দেব ভেবে পাচ্ছি না। বাড়িতে ছাগল, মুরগি যা ছিল সব বিক্রি করে আবাদ করেছি এখন তো ধানের সঙ্গে আশা-ভরসা সব জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। কোনও ওষুধ দিয়েও তো কাজ হচ্ছে না। এখন আমি কী খাব আর জমির মালিককে কী দেব?’
লাকসাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল হক জানান, ব্লাস্ট ছত্রাকজনিত ও বীজবাহিত রোগ। আকাশ মেঘলা ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলে বা গরম-ঠাণ্ডা আবহাওয়ায়ও এ রোগের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। মাঠকর্মীসহ সংশ্লিষ্টরা কৃষকের ফসল রক্ষার্থে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ