খাবার নেই ঘরে। শরীরে শক্তি নেই যে বের হবেন খাবারের সন্ধানে। করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে এখন অবধি কোনো ত্রাণ পাননি তিনি। ফলে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
আজ বুধবার ষাটোর্ধ্ব নারী কালী দে’র দুয়ারে যখন হাজির হলো কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশনের খাদ্য উপহার, তখন তিনি আপ্লুত হয়ে পড়েন। চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন, ‘ভগবানের কাছে দোয়া করি তোমাদের যেন ভালো হয় বাবা।’
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালী বাজার লাগালো এলাকায় থাকেন তিনি। স্বামী মারা গেছেন বেশ আগে। একমাত্র মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। তারপর সেও নিরুদ্দেশ। একা জীবন টেনে নিয়ে বেড়াচ্ছেন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। মানুষের বাড়িতে কাজ করে কখনো হাত পেতে যা পান তা দিয়ে চলে আহার। থাকার ঘরটিও জরাজীর্ণ। মরিচায় খয়ে গেছে টিন। কুকুর-বেড়ালের আনাগোনা। ফুটো চাল গড়িয়ে পানি পড়ে কাঁদা হয় মাটির মেঝেতে। এর মাঝেই দম নিয়ে বেঁচে আছেন কালী দে।
করোনার কারণে সৃষ্ট দুর্যোগে তার মতো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশন।
সমাজসেবামূলক বেসরকারি এই সংস্থাটির চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান দোলন। যিনি ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্যও। তার পক্ষ থেকেই আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী উপজেলার অতিদরিদ্র ও প্রকৃত অভাবীদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী।
এর অংশ হিসেবে বুধবার মধুখালীর কামারখালী, আড়পাড়া, ডুমাইন, গন্ধখালী, মচলন্দপুর, কমরপুর, দয়ারামপুর এলাকার বেশ কিছু অসহায়, দুস্থ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ও কামারখালী উদ্দীপন বিদ্যানিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশন। গত ৭ এপ্রিল থেকে ধারাবাহিকভাবে আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালীর বিভিন্ন এলাকার দরিদ্র ও অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সাড়ে তিন হাজারের বেশি দরিদ্র পরিবার এসব সহায়তা পেয়েছে। এছাড়াও আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের ত্রাণ ভাণ্ডারেও আর্থিক অনুদান দিয়েছে কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশন।
কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশন সারা বছরই মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে ইতোমধ্যে আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী, মধুখালীর প্রায় ১০ হাজার মানুষের চোখের চিকিৎসা, সহস্রাধিক মানুষের ছানি অপারেশন, সহস্রাধিক বেকার যুবক-যুবতীকে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজের উপযোগী করে তোলাসহ স্বাস্থ্য, শিক্ষা বঞ্চিতদের জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম