২৯ মে, ২০২০ ১৯:৪৫

করোনায় কর্মহীনদের পাশে দাঁড়াতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ কাঠমিস্ত্রির

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

করোনায় কর্মহীনদের পাশে দাঁড়াতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ কাঠমিস্ত্রির
করোনায় কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সাধ থাকলেও সাধ্য নাই। তাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতীক ‘নৌকা’ খচিত একটি আকর্ষণীয় খাট তৈরি করেছেন বগুড়ার শাজাহানপুরের হতদরিদ্র কাঠ মিস্ত্রি ইমদাদুল হক (৩৯)। এই দুঃসময়ে পরিবার চালানোর পর তার হাতে অবশিষ্ট কোন টাকা ছিলনা। তাই টাকা ধার নিয়ে খাটটি তৈরি করেছেন। খাট বিক্রির পুরো লভ্যাংশই তিনি করোনায় কর্মহীন মানুষের মাঝে বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 
 
দুইমাসেরও বেশি সময় ধরে তিনি এটি তৈরি করেছেন। আজ শুক্রবার বাদ জুম্মা ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের পশ্চিমপাশে কাটাবাড়িয়া মোড়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে তিনি খাটটি প্রদর্শন করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, গত ২৬ এপ্রিল থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকে তিনি খাট তৈরির কাজে হাত দেন। এতে তার লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়েছে। ঈদের আগেই এটি বিক্রির চিন্তা ভাবনা থাকলেও শ্রমিক সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। 
 
তিনি আরও বলেন, যশোর থেকে আনা রোড কড়ই কাঠের তৈরি খাটের চারপাশে ৪টি এবং বেডসাইটে ৩টি সহ মোট ৭টি নৌকা অংকিত হয়েছে। বৈঠা ও ছৈসহ প্রতিটি নৌকা পানির উপরে ভাসমান। পানিতে ভাসছে কুড়ি ও পাতাসহ জাতীয় ফুল শাপলা। খাটের শিয়রে থাকা নৌকার ছৈ এর উপর উদীয়মান সূর্য এবং একপাশে পতপত করে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা। সবমিলিয়ে খাটের কারুকার্যে ফুটে উঠেঠে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দৃপ্ত কণ্ঠস্বর। লাখো শহীদের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ইতিহাস। 
 
আর্তমানবতার সেবার উদ্দেশ্যে যে মানুষের হাতে এই শিল্প কর্মটি দৃশ্যমান হয়েছে তিনি হলেন শাজাহানপুর উপজেলার চোপীনগর ইউনিয়নের বৃ-কুষ্টিয়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের কাঠমিস্ত্রি আব্দুল গফুর সাকিদারের পুত্র ইমদাদুল হক। ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর ১৩ বছর বয়সে তিনি বাবার হাত ধরে কাঠমিস্ত্রির কাজে নেমে পড়েন। 
 
এই পেশায় উপার্জন করেই তিনি বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানসহ ৭ সদস্যের সংসার পরিচালনা করেন। ২ মাস আগে তার বাবা মৃত্যুরবণ করেছেন। পরের বাসা-বাড়ি এবং ফার্ণিচারের দোকানে তিনি কাজ করতেন। ২০১১ সালে তিনি ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক সংলগ্ন রহিমাবাদ মধ্যপাড়া এলাকায় ‘আল-মদিনা ফার্ণিচার’ নামক একটি ছোট্ট প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। মাত্র একজন কর্মচারী নিয়ে কাজ করেন। এরই মধ্যে করোনা মহামারীতে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। ২ বছর আগে তার কিছু কাঠ কেনা ছিল। কিন্তু টাকার অভাবে তিনি তা কাজে লাগাতে পারছিলেন না। 
 
অবশেষে করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা চিন্তা করে পরিচিত ২-৩ ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে তিনি ‘নৌকা’ খচিত আকর্ষণীয় খাট তৈরির কাজে হাত দেন। তার এই মহত উদ্যোগ ও ব্যতিক্রমী শৈল্পিক কর্মের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আজ শুক্রবার বাদ জুম্মা কাটাবাড়িয় মোড়ে বি-ব্লক, সি-ব্লক ও মাঝিড়া এলাকার ১৫-২০ জন ফার্ণিচার ব্যবসায়ি ও উৎসুক জনতা সেখানে ভিড় জমায়।  
 
 
 
বিডি-প্রতিদিন/সিফাত আব্দুল্লাহ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর