ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত লালমনিরহাটের ৬৩ চরের মানুষ। নদীর মাঝখানে জেগে উঠা এসব চরবাসীর কপালে ঈদের আগেও জোটেনি কোন সাহায্য সহযোগিতা। সরকারের পক্ষ থেকে ১০ কেজি করে ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও তাদের অধিকাংশই সে চাল পাননি অনেকেই। ঘর-বাড়ী হারিয়ে পরিবারগুলো এখন নিঃস্ব। ঈদ যেন তাদের কাছে শুধুই স্মৃতি। চোখের সামনে নদীতে আশ্রয় শেষ ঘরটুকু হারিয়ে ছিন্নমূল এসব মানুষের কান্নার রোল যেন থামছেই না। একদিকে করোনা আর নদী তাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে।
সরেজমিনে জেলার চর বাসুরিয়া, চর রাজপুর, গোবর্ধনে গিয়ে দেখা গেল নিত্য দিনের মত ঈদের দিনেও স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে তারা। ভাল কাপড় তো দূরের কথা জোটেনি ভাল খাবারও। চরের অধিকাংশ বসতিদের বাড়িতে হাঁটু পানি। তার উপর চেপেছে ভাঙনের তীব্রতা। তাই বন্যা কবলিত এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষই যেতে পারেনি মাঠে নামাজ পড়তে।
বন্যা আর ভাঙনের কারণে ফিকে হয়ে গেছে তাদের ঈদ আনন্দ। ঈদের আনন্দের দিনে চরাঞ্চলের এসব মানুষের কেটেছে ভাঙনের হাত থেকে বাড়ি রক্ষা আর চলাচলের জন্য রাস্তা নির্মাণ কাজে। তাই ঈদের আনন্দ নেই বানভাসী এসব মানুষের।
নদী ভাঙন আর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সহায় সম্বল হারিয়ে অনেকেই ঠাঁই নিয়েছেন উঁচু স্কুল ও বাঁধের উপর। তাদের দিন কাটছে অনাহারে, অর্ধাহারে ও নানা কষ্টে। ঈদের হাসির পরিবর্তে তাদের কান্না বয়ে এনেছে। কোরবানির এই ঈদেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি এক টুকরো মাংস। এমনটাই জানালেন চরবাসীরা।
লালমনিরহাটের আদিতমারীর মহিষখোচা চরের বাসিন্দা আনছার আলী, কান্না জড়িত কন্ঠে জানালেন, হামার ফির গরীবের ঈদ আছে নাকি? হামার বাড়ি ভাঙ্গি যায়ছোল তার খবর কায়ও নাই নেয়। আইজ ঈদের দিন ফির কায় নেয় হামার খবর।
নদীর মধ্যবর্তী এলাকায় বাস করেন প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ। দিন মজুর, জেলে ও আর ক্ষেতখামারে কাজ করে খাবার জোটে তাদের। শঙ্কা আর ক্ষুধার তাড়নায় কাটছে তাদের দিন। চরের অসংখ্য মানুষ আবেগ-তাড়িত হয়ে বলেছেন, ঈদ তাদের জন্য সব সময়ই স্বপ্নের মতো।
চরাঞ্চলের মানুষের কষ্টের কথা স্বীকার করে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানালেন, জেলার হতদরিদ্র ৭৬ মানুষকে ভিজিএফ এর চাল বিতরণ করা হয়েছে এবং ঈদকে সামনে রেখে সোস্যাল সেফটিনেটের মাধ্যমে সব ধরনের ভাতা প্রদানের চেষ্টা করা হয়েছে। সেই সাথে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সামগ্রীও ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার কাজ চলছে। বার বার বন্যা আসায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পাশে আছি এই ঈদে এটাই আমাদের অঙ্গীকার।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন