সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার ও মেরামতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রধান শিক্ষকরা নামমাত্র সংস্কার কাজ করে বরাদ্দ লোপাট করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার আম্ফানে কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনসেড ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও অনেক স্কুলে কোন টিনসেড ঘরের অস্তিত্ব নেই।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালিকা সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে প্রেরন করে। ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলো সংস্কারের জন্য ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ওই উপজেলার কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব সমরসিংহ, লাখেরাজ কসবা, টরকীর চর, ইল্লা, নরসিংহলপট্টি, বিল্বগ্রাম, উত্তর রামসিদ্দি, উত্তর চাঁদশী, কাঁঠালতলী, মিয়ারচর, জয়শুরকাঠি, সাহেবেরচর, দক্ষিণ হোসনাবাদ ও কাণ্ডপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ ২৩ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকূলে দেড় লাখ টাকা করে মোট ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত ২৩টি স্কুলের তালিকায় থাকা টরকীর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২টি পাকা ভবন রয়েছে। এর একটি ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে গত বছর। আম্ফানে এই বিদ্যালয়ের দুটি ভবনের কোনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। অথচ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ওই বিদ্যালয়টিকে আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় দেখিয়ে সংস্কারের জন্য দেড়লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। যদিও ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামরুল হাছান বলেন, পুরানো ভবনের ছাদ দিয়ে পানি পড়ার কারণে বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে ছাদে প্যাটেনস্টোন করা হয়েছে।
বেজগাতি মৈস্তারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২টি পাকা ভবনের একটিও আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। অথচ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ওই বিদ্যালয়টি আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকাভুক্ত করে সরকারি অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। ওই বিদ্যালয়ে কোন টিনসেড ঘর না থাকলেও একটি টিনের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করে সংস্কারের জন্য দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তবে ওই বিদ্যালয়ে কোন সংস্কার কাজ হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কল্পনা রানী জানান, তাদের বিদ্যালয়ে আগে একটি টিনসেড ঘর ছিলো। গত ৩ বছর আগে পাকা ভবন নির্মাণ হয়েছে। বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করা হয়নি। বরাদ্দের অর্থ দিয়ে একটি টিনসেড ঘর নির্মাণ করার কথা বলেন তিনি। একই ভাবে ইল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পূর্ব সরমসিংহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও আম্ফানে কোন ক্ষতি হয়নি। অথচ ওই বিদ্যালয়ে কোন টিনসেড ঘর নেই।
এদিকে আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় থাকা লাখেরাজ কসবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব সমরসিংহ, টরকীর চর ও ইল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ অধিকাংশ বিদ্যালয় নামমাত্র সংস্কার কাজ করে বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করে সংশ্লিস্টরা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জানান, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে যে সব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সখ্যতা রয়েছে সেসব বিদ্যালয় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও ক্ষতিগ্রস্তের তালিকাভূক্ত করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফয়সাল জামিল বলেন, আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কার কাজ সম্পন্ন করার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে। তারপর তাদের বিল দেয়া হয়েছে। যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংস্কার কাজ এখনও শেষে হয়নি সেগুলোর কাজ চলমান রয়েছে বলে তিনি জানান।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন