ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বুধবার বিকেলে জেলার কুলাঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানিও বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে।
তিস্তা ও ধরলার পানি বাড়ায় লালমনিরহাটের নদী অববাহিকা নিম্নাঞ্চল হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে নদী অববাহিকার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন।
গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার আদিতমারী, হাতিবান্ধা ও সদরের ৮টি ইউনিয়নের ২৯টি ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে জেলার বেশ কয়েকটি স্থাপনা। পানি বাড়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে তিস্তা ধরলা নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা ৬৩ চরের মানুষ।
বন্যার পানিতে তৃতীয়বারের মতো তলিয়ে গেছে রোপণ করা আমনের ক্ষেত। ডুবে গেছে শীতকালীন আগাম শাক সবজির ক্ষেতও।
লালমনিরহাট কৃষি অফিস সূত্র জানায়, গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে চরের প্রায় ৭০০ একর জমির রোপা আমন ক্ষেত ও আড়াই একর জমির বিভিন্ন সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
সদরের কুলাঘাট ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী জানান, ধরলার পানি ব্যাপকহারে বাড়তে শুরু করেছে। বুধবার বিকেলে পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলার ভাঙনে ১৭টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছে নদীপাড়ের মানুষ।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, গত ৭ দিন থেকে তিস্তার পানি ওঠানামা করছে। বুধবার বিকেলে পানি আবারও বেড়ে গিয়ে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বুধবার বিকেলে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা এখন বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি আরও বাড়তে পারে আশঙ্কায় তিস্তা-ধরলা অববাহিকা এলাকার সবাইকে সর্তক রাখা হয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে মনে হচ্ছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন পাউবোর এই কর্মকর্তা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা আরও জানান, সার্বিক বিবেচনায় মনে হচ্ছে যেকোনো সময় তিস্তার ব্যারেজ পয়েন্টেও পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
তিস্তা বিধৌত রাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন জানান, পানি বাড়ার সাথে সাথে তিস্তায় শুরু হয়েছে ভাঙন। ইতিমধ্যেই তার ইউনিয়নের ৮ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে আমন ক্ষেতসহ শাক সবজির ক্ষেত। চরম বিপাকে পড়েছে কৃষকরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানায়, নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে জেলার চর রাজপুর, চর গোকুন্ডা, চর কালমাটি, চর ফলিমারী, ইশোরকোল, পূর্ব ইচলী, রুদ্রেশ্বর, চর ভোটমারী, চর ডাউয়াবাড়ি, সিন্দুনা, গড্ডিমারী, সানিয়াযান, কুলাঘাট, মোগলহাট এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। এতে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে এলাকাগুলোতে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই