রোদ্রের তীব্রতা কমে গেছে। বাতাসের আর্দ্রতায় বেশ শীত অনুভূত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর কুয়াশায় ভরে যাচ্ছে চারপাশ। হেমন্তে শীতের আগমনী বার্তা যেমন পাওয়া গেছে। ঠিক তেমনি মাঠে মাঠে ধান পেকেছে সে বার্তাও পাওয়া গেছে। জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার চাষিরা নবান্নের আমেজ নিয়ে আমন ধান কাটতে শুরু করেছে। আসছে নবান্নে উপজেলার গ্রামগুলো পিঠা পুলির উৎসবে সাজবে। অতিথি হবেন মেয়ে ও মেয়ে জামাইসহ আত্মীয়-স্বজনরা। উপজেলায় চলছে তারই প্রস্তুতি।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বাসিন্দারা নবান্নের আমেজ নিয়ে ধান কাটতে শুরু করেছেন। বগুড়া জেলার মধ্যে নন্দীগ্রাম উপজেলার চাষিরা সবার আগে আমন ধান কেটে ঘরে তোলেন। নবান্নকে ঘিরে এই ধান কাটা মাড়াই করে থাকে। প্রতিবছরের মত এবছরও উপজেলার চাষিরা ধানকাটা শুরু করেছেন।
জানা যায়, চিরায়ত নিয়মে হেমন্তের মধ্যভাগে (প্রথম অগ্রহায়ণ) নতুন ধান ঘরে তোলার পর বাঙালির নবান্ন উৎসব শুরু হয়। বাংলার কৃষক সমাজ প্রাচীন কাল থেকে নবান্ন উৎসব পালন করে আসছে। কালের বিবর্তনে অনেক কিছু পরিবর্তন হলেও কৃষকরা নবান্ন উৎসব পালন করতে ভুলে যায়নি আজও। গ্রাম বাংলায় কৃষকেরা নবান্ন উৎসব পরিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য মেয়ে জামাইসহ আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ীতে আমন্ত্রণ করে এনে নতুন চালের পোলাও, পিঠা ও পায়েসসহ নিত্য নতুন খাবার তৈরি করে ধুম-ধামে ভুঁড়ি ভোজের আয়োজন করে থাকে। দুই একটি গ্রামে অবশ্য নবান্নের আগাম আতিথেয়তা শুরু হয়ে গেছে।
নন্দীগ্রাম পৌরসভার পূর্বপাড়া গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, গ্রাম্যবধূরা জামাইকে সাথে নিয়ে বাপের বাড়িতে নবান্ন উৎসব করার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করে। নবান্ন উৎসবে গ্রামের কৃষকেরা মিলে-মিশে গরু, মহিষ ও খাঁসি জবাই করে। হাট-বাজারের বড় মাছ কিনে আনে। এই নিয়মের ধারাবাহিকতায় কৃষকদের ঘরে ঘরে চলছে এখন ঐতিহ্যবাহী নবান্ন আমেজ। সব-মিলিয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলার কৃষকেরা নবান্ন উৎসব পালনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। বাড়ি বাড়ি চলছে ঐতিহ্যবাহী বাৎসরিক নবান্ন উৎসব পালনের প্রস্তুতি
বগুড়ার নন্দীগ্রমের আমন চাষি মো. ফারুক কামাল জানান, ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। তবে বাদ সাধছে ধান কাটার শ্রমিকরা। দ্বিগুণ টাকায় তাদের দিয়ে ধান কাটাতে হচ্ছে। আগাম জাতের আমন ধান কেটে ওই জমিতে রবিশষ্য আলু, সরিষা চাষ করার কথা তিনি জানান। তিনি জানান, উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে কয়েক দিন ধরেই চাষিরা ধান কাটতে শুরু করেছে।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার কৃষি অফিসার মো. আদনান বাবু জানান, এই উপজেলার কৃষকরা ১৯ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করেছে। এরমধ্যে ৩ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের ধান চাষ হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহ পর উপজেলা জুড়ে পুরোদমে ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হবে।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন