চলনবিল অধ্যুষিত শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বিস্তৃর্ণ মাঠজুড়ে এখন রসুনের ঘ্রান। বিনাচাষে বোনা রসুনের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার চর হামকুড়িয়া, চর কুশাবাড়ী, নাদো সৈয়দপুর, ধামাইচ, সবুজপাড়া, বিন্নাবাড়ী, দিঘীসগুনা, কুন্দইল ও ধামাইচসহ বিভিন্ন এলাকায় শতশত হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হয়েছে। মাঠে মাঠে রসুন তোলায় কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও রসুন তুলে পরিষ্কার করছেন।
প্রতিবছরই এ অঞ্চলের চাষিরা বিনাচাষে রসুন আবাদ করেন। ধানের আবাদে লাভ কম হওয়ায়, রসুন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষিরা। বিনা চাষে রসুন বোনা হলেও সার-কীটনাশক ও শ্রমিক মজুরিসহ আনুসাঙ্গিক খরচ এবার বেড়েছে। বিঘা প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়।
চর হামকুড়িয়া গ্রামের রসুনচাষি আতাব আলী জানান, বিনা চাষে প্রায় চার বিঘা জমিতে রসুন আবাদ করেছি। তারপরও শ্রমিকের মজুরি, সার-কীটনশাক দিয়ে বিঘাপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। তবে এবার যে ফলন হয়েছে ন্যায্য দাম পেলে প্রায় লাখ টাকা আয় হবে।
নওগাঁ ইউনিয়নের মহিষলুটি গ্রামের কৃষক নজরুল জানান, গত বছর আমরা কৃষকরা প্রতি মণ রসুন বিক্রি করেছি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায়। এবারও সেই দাম থাকলে ভাল লাভবান হতে পারবো।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফুন্নাহার লুনা জানান, গত বছর তাড়াশে ৪৪০ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হয়েছে। এ বছর আমরা ৪৪০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম। লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে উপজেলায় ৫১৭ হেক্টর জমিতে রসুনের চাষ হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। বাজার মূল্যেও বেশি। আশা করছি, আরও দাম বাড়বে। এসব রসুন দেশের চাহিদা অনেকটাই পূরণ করবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হানিফ জানান, শীতের মৌসুমে মাটি ভেজা থাকে। আর্দ্র মাটিতে কোনো ধরনের চাষ না দিয়ে সার ছিটানোর পর রসুন বোনেন চাষিরা। এরপর খড় বা নাড়া দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এতে রসুনের ফলন ভালো হয়। চাষের বাড়তি খরচও তেমন লাগে না। জেলায় এবার ১ হাজার ৪ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হয়েছে। যার অধিকাংশই চলনবিল অঞ্চলে। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি রসুনের চাষ করা হয়েছে তাড়াশে। ইতিমধ্যে ৩৫১ হেক্টর জমির রসুন তুলেছেনে চাষিরা। প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ৭.২ টন রসুন উৎপাদন হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই