কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। এতে নদীর শুকনো চরে বোরে ধানের চাষ করেছেন কৃষকরা। কিন্তু যেসব জেলেরা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন, তাদের সকলের অবস্থা এখন করুন।
এক সময় ধরলা নদীতে চৈত্র-বৈশাখেও ছিল পানি। কিন্তু এখন বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই নদী উপচে গিয়ে প্রবল বন্যার সৃষ্টি করে। গত বছর পরপর ৬ বার বন্যার কবলে পড়ে এসব মানুষ। আর শুকনো মৌসুম এলে তা দ্রুত শুকিয়ে যায়। বর্তমানে এখন ধরলা নদী গেছে শুকিয়ে। নদীতে তেমন পানিও নেই, আবার পর্যাপ্ত মাছও নেই।
অন্যদিকে, নদীতে জেগে ওঠা চরে কৃষকরা লাগিয়েছেন বোরো ধান। ফলে, মাছের অভাবে নদীকেন্দ্রীক মানুষগুলো যেমন বেকার হয়ে পড়েছেন, তেমনি ধরলার চরে কৃষকরা বোরো আবাদ করে ধান পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
ধরলার শাখা নদী দুধ কুমার পাড়ের বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেনসহ সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের গারুহারা গ্রামে রয়েছে অনেক জেলে পরিবার। দিনভর মাছ ধরে তা বাজারে বিক্রি করে তাদের সংসার চলে। কিন্তু এখন তা আর তেমন নেই। ফলে অনেকেই বেকার জীবনযাপন করছেন।
ধরলা পাড়ের বাসিন্দা সাইফুল মিয়া বলেন, গেল বছর অতিবৃষ্টি ও ছয়বার বন্যায় অনেকের ফসল ডুবে নষ্ট হয়। বসতভিটা, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট ডুবে যায়। কিন্তু সেই নদী এখন শূন্য। চর পড়ে নদী শুকিয়ে গেছে।
কৃষক জামান মিয়া জানান, চরে যে জমি জেগে উঠেছে, সেখানে বোরো লাগিয়েছি। তবে নদীতে পানি কম থাকায় সেচ ক্রুটি হচ্ছে। ছোট-বড় ১৬টি নদ-নদীর জেলায় সম্প্রতি দেখা যায়, রাক্ষসী ধরলা নদী শুকিয়ে গেছে। বিগত ২০১৭ ও ২০২০ সালের প্রবল বন্যায় নদী তীরবর্তী অনেক ক্ষতি সাধিত হয়। ধরলা ব্রিজের নিচে এখন শুকনো জায়গা। আর নদীর মাঝে বিভিন্ন জায়গায় পড়েছে বড় বড় চর। অনেক জায়গায় নদীতে এক হাঁটু পানি দিয়ে পার হন পথচারীরা।
এখান থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও শংকোস পাড়ে গিয়ে দেখা যায় একই চিত্র। নদের পাড়ে যাত্রাপুর হাট। বর্তমানে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ঘাট আছে কিন্তু নৌকা চলে না। ঘাটে বাঁধা রয়েছে ডিঙি ও বড়বড় নৌকাগুলো।
ঘাটের মাঝি আব্দুস ছামাদ ও আনোয়ার হোসেন বলেন, অনেক জায়গায় চর পড়েছে। এখন আর নৌকা চালানো যায় না। তাই বেঁধে রেখেছি।
কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদ ও স্থানীয় সরকারের তথ্য মতে, জেলার ১৬টি নদ-নদীতে মোট ১৭২টি নৌ-ঘাটের মধ্যে জেলা পরিষদের ৫৭টি এবং ইউনিয়ন পরিষদের ১১৫টি ঘাট রয়েছে। পানি কমে যাওয়ায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি ঘাটে নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ২০টি বন্ধ হওয়ার পথে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর উজান থেকে বন্যার পানির সাথে বালু এসে সব নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যায়। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে জেলার নদ-নদী খনন জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই