নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সোমবার ভারতের নির্বাচন কমিশন ২৪ ঘণ্টার জন্য পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জির নির্বাচনী প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নেয়। আর সেই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মঙ্গলবার কলকাতার গান্ধী মূর্তির সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন মমতা ব্যানার্জি।
এদিন সকাল সাড়ে ১১ টা নাগাদ হুইল চেয়ারে করে মেয়ো রোডে অবস্থিত গান্ধী মূর্তির সামনে পৌঁছান মমতা। সেখানে মুখে কালো কাপড় বেঁধে নীরব প্রতিবাদ জানান তিনি। হুইল চেয়ারে বসেই দুইটি ছবি আঁকতে দেখা যায় মমতাকে। যদিও মমতার সাথে এই মঞ্চে দলের অন্য কোন নেতা-নেত্রীরা উপস্থিত ছিলেন না। বিকাল ৩ টা পর্যন্ত ওই ধরনা মঞ্চে ছিলেন মমতা। এরপর বাড়ির দিকে রওনা দেন তিনি।
মমতার এদিনের এই পদপেক্ষকে সমর্থন জানিয়ে তার পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে শিবসেনা। ট্যুইট করে দলের মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত জানান ‘এটা ভারতীয় গণতন্ত্র ও স্বাধীন, স্বতন্ত্র সংগঠনগুলির সার্বভৌতত্বের ওপর সরাসরি আক্রমণ। আমরা বাংলার বাঘিনীর পাশে আছি।’
এর আগে সোমবার রাতে কমিশনের সচিব রাকেশ কুমারের জারি করা নির্দেশ অনুযায়ী ওইদিন রাত ৮ টা থেকে পরদিন মঙ্গলবার রাত ৮ টা (২৪ ঘন্টা) পর্যন্ত কোনওভাবেই নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। কমিশনের বক্তব্য- প্ররোচনা ও উস্কানি ছড়ানোর মতো ভাষণ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এতে আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপরেও প্রভাব পড়তে পারে।
কমিশনের এই সিদ্ধান্তের পরই ক্ষোভ উগড়ে দেন তৃণমূল নেত্রী। ট্যুইট করে মমতা লেখেন ‘ভারতের নির্বাচন কমিশনের অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আমি মঙ্গলবার দুপুর ১২ টা থেকে কলকাতার গান্ধী মূর্তির নিচে ধরনায় বসবো’।
মঙ্গলবারই চারটি নির্বাচনী জনসভায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল মমতার। কিন্তু কমিশনের তরফে রাত ৮ টা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ থাকায় সেই কর্মসূচিতে রদবদল করতে হয় তাকে।
নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে গত ৩ এপ্রিল তারকেশ্বরের একটি জনসভা থেকে সংখ্যালঘু ভোট-ভাগ এবং ৭ এপ্রিল কোচবিহারের একটি জনসভা থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও নিয়ে মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছিল মমতাকে। এরপরই কমিশনে নালিশ জানায় বিজেপি। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই ৭ ও ৮ এপ্রিল পরপর দুই দিন নির্বাচন কমিশনের তরফে চিঠি দিয়ে শো-কজ করা হয় তৃণমূল নেত্রীকে। তার প্রেক্ষিতে ৯ ও ১০ এপ্রিল শো-কজের জবাবও দিয়েছিলেন মমতা। যদিও মমতার সেই জবাবে সন্তুষ্ট না হয়েই কঠোর সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন।
এদিকে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে বিজেপি নেতা ও হাবড়া বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিনহার বিরুদ্ধেও কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে কোচবিহারের শীতলকুচিতে সহিংসতার ঘটনা ও মানুষের মৃত্যু নিয়ে প্ররোচনামূলক মন্তব্যের অভিযোগে আগামী ৪৮ ঘন্টার জন্য রাহুলের নির্বাচনী প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে মঙ্গলবার দুপুর ১২ টা থেকে ১৫ এপ্রিল দুপুর ১২ টা পর্যন্ত কোন নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না তিনি।
এর পাশাপাশি শীতলকুচির ঘটনা নিয়ে প্ররোচনামূলক মন্তব্যের অভিযোগে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকেও সতর্ক করে নোটিশ পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আগামীকাল সকাল ১০ টার মধ্যে নোটিশের উত্তর দিতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে আপত্তিমূলক বক্তব্য রাখার জন্য বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও সতর্কবার্তা পাঠোনো হয়েছে কমিশনের তরফ থেকে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল