শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মরিচপুরান ইউনিয়নে ভোগাই নদীর পাহাড়ি ঢল থেকে ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। উপজেলা পরিষদের এডিবি, টিআর, কাবিখা প্রকল্পের টাকা ও স্বেচ্ছাশ্রমে এই কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই বাঁধ নির্মাণের ফলে নালিতাবাড়ী ও হালুয়াঘাট উপজেলার কয়েক হাজার একর জমির ফসল রক্ষা পাবে। রক্ষা পাবে নদী ভাঙ্গনের আগ্রাসন থেকে।
উপজেলা পরিষদ, এলাকাবাসী ও সরেজমিনে কথা বলে জানা গেছে,মরিচপুরান ইউনিয়নের বুক চিরে প্রবাহমান ভোগাই নদীর ইচ্ছেমাফিক পথ চলায় উপজেলার মরিচপুরান, খলাভাংগা, গুরুপপুর, বাঁশকান্দা, উল্লারপাড়, হালুয়াঘাট উপজেলার পাবিয়াজুড়ি, রামনগর, ধুরাইল, আমতলীসহ প্রায় বিশ গ্রামের মানুষ ছিল অসহায়। প্রায় একযুগ আগে ভোগাই নদীতে পাহাড়ী ঢলের পানিতে খলাভাঙ্গা গ্রামে ভোগাই নদের প্রায় এক হাজার দুইশত মিটার বাঁধ ভেঙে যায়। এরপর উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে এলেই এসব এলাকার কৃষকদের ফসল ঘরে উঠানো ছিল অনিশ্চিত। ওই এলাকা দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে ৪-৫ হাজার একর আমন ফসল পানিতে তলিয়ে যেত।
শুধু তাই নয় প্রচন্ড পানির তোড়ে ভাঙতো নদী তীর, নদী গর্ভে বিলীন হতো ফসলি জমি। বাড়ি ঘর, রাস্তাঘাট পানিতে ডুবতো। মানুষের এই দুর্ভোগ লাঘবে উপজেলা পরিষদ এডিবির ৩১ লাখ টাকা ও টিআর কাবিখা প্রকল্পের ১৪ লাখ টাকায় নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদ ভোগাই নদীর প্রায় ৭০০ মিটার বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এর সঙ্গে স্বেচ্ছা শ্রমে বাঁধ নির্মাণের কাজে যোগ দেয় গ্রামের মানুষ। মাত্র ২০ দিনে সিমেন্ট ও বালি মিশ্রিত ৫০ হাজার বস্তা দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে এই বাঁধ।
খলাভাংগা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশীদ জানান, এই একটি মাত্র বাঁধের কারণে আমরা কখনই আমাদের জমিতে একটি মাত্র বোর ফসল ছাড়া আর কোন ফসল করতে পারিনি। আমন আবাদ করে আমরা কোনদিন ঘরে তুলতে পারিনি।
একই গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বাড়িঘর, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়া ছাড়াও নদী গর্ভে বিলীন হতো আমাদের আবাদি জমি। আবার অপর পাড়ে জেগে উঠা জমি নিয়ে মারামারিও হতো। এখন এই বাঁধটি নির্মিত হওয়ার ফলে ভোগাই নদীর পথ চলা নিয়ন্ত্রণে আসবে। আমরা আশা করছি, এই বাঁধের কারণে আমাদের ফসলি জমি রক্ষা পাবে। নিশ্চয়তা হবে আমাদের ঘাম ঝরা ফসল ঘরে তোলার।
নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোকসেদুর রহমান লেবু বলেন, বর্ষায় এই অঞ্চলের মানুষ দুর্ভোগ আমি স্বচক্ষে দেখেছি। তাই এই জন দুর্ভোগ লাঘবে অনেকটা সাহসের উপর ভর করে বিশাল এই কাজে হাত দিয়েছি। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় কাজটি প্রায় শেষ। আশা করছি, এই বাঁধের মাধ্যমে এলাকাবাসী তাদের কাঙ্খিত সুফল পাবে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ তাফসির