সুভাষ দেব। বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার উত্তর ভাড়াউড়া গ্রামে। বছর সাতেক হয় তিনি দেশে এসেছেন। এর আগে একটানা আঠারো বছর আরব-আমিরাতে ছিলেন। করেছেন পরের চাকরি। ছিল না কোনো স্বাধীনতা। কাজের ব্যবস্থায় পেতেন না অবসর সময়। মাস শেষে যা বেতন পেতেন নিজের খরচ রেখে পাঠিয়ে দিতেন দেশে পরিবার পরিজনের জন্য। নিজের কাছে জমাতে পারেননি একটি টাকাও।
বিদেশের মাঠিতে হাঁড়ভাঙা পরিশ্রমে শরীরে বাসা বাঁধে নানান রোগ। ২০১৪ সালে তিনি একেবারেই দেশে চলে আসেন। সংসারের খরচ জোগাতে শুরু করেন কৃষি কাজ। প্রথম বছর জমিতে ধান চাষ করেন। পরের বছর হাওরে জমি লিজ নিয়ে করেন মাছের চাষ। এরপর পালেন গবাদিপশু। এতসব তার একার পক্ষে কুলানো সম্ভব হচ্ছিল না। তাই ধীরে ধীরে সবকিছু ছেড়ে কৃষিতেই মনোনিবেশ করেন সুভাষ। একসময় তিনি পরের চাকরি করলেও আজ তার এখানেই কর্মসংস্থান হয়েছে গ্রামের আরো তিনজনের।
বর্তমানে তার জমিতে আছে ঝিঙ্গা, চিচিংগা, গ্রীষ্মকালীন লাউ, ঢেঁড়স ও বেগুন। তিনি ৭ শতক জমিতে লাল তীরের হাইব্রিড হিরো জাতের ঝিঙ্গা চাষ করেছেন। ফলন খুব ভাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ কেজি বিক্রি করেছেন। প্রতি কেজি ঝিঙ্গা বিক্রি করছেন ৪৫ টাকা দরে। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই চিচিংগা বিক্রি শুরু করবেন। ফুল এসেছে বেগুন ও লাউ গাছে। আবার লাল শাক, করলা ও ডাটা ফসলের বীজ রোপণের জন্য জমি তৈরি করছেন। সারা বছরই তিনি সবজি চাষ করেন। এই সবজি চাষ করেই এখন তার প্রতিমাসে সংসারের খরচ চলাচ্ছেন। আবার বছর শেষে সঞ্চয়ও করছেন।
সুভাষ দেব বলেন, ‘৪/৫ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ গিয়ে চাকরি না করে এই টাকা দিয়ে দেশের মাঠিতে কৃষি কাজ করা অনেক ভাল। চাকরি করে খুব বেশি হলে মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেতন পাওয়া যায়। আর বুদ্ধি করে কৃষি কাজ করলে এর থেকে অনেক বেশি আয় করা যায়। কৃষি কাজ করে আমি প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা সংসার খরচ করছি। আবার বছরে এক লাখ টাকা সঞ্চয় করছি। সারাদিন কাজ শেষে সন্ধ্যার পর একটু অবসর সময় পাচ্ছি। রয়েছে ব্যক্তি স্বাধীনতা। কৃষি কাজ করেই আমি সুখি।’
বিডি প্রতিদিন/এমআই