তিন দফা দাবিতে নওগাঁয় পরিবহন শ্রমিকের কর্মবিরতির ঘোষণা নওগাঁ জেলা ট্রাক-ট্যাংকলড়ী ও ক্যাভার্ডভ্যান পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ২৬৫০ এর সাপাহার উপজেলার শ্রম কল্যাণ উপ-কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা, জেলা নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিকদের মারপিট এবং মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে আগামী ৩০ মে সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
গত শনিবার (২৩ মে) নওগাঁ জেলা ট্রাক-ট্যাংকলড়ী ও কাভার্ডভ্যান পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত রাজশাহী বিভাগীয় শ্রম দপ্তর বরাবর লিখিতভাবে এ কর্মবিরতির বিষয়টি জানানো হয়।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সাপাহার থানার লোড পয়েন্ট অফিসের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন বন্ধের জন্য রাজশাহী বিভাগীয় শ্রম দপ্তর বরাবর গত ২৫ মার্চ ২৬৫০ সংগঠনের সভাপতি রওশন জালাল লিখিতভাবে অভিযোগ করলে ৩০ মার্চ সরেজমিনে ওই দপ্তরের সহকারী পরিচালক আলমুতাজিদুল ইসলাম ও প্রধান সহকারী বিকাশ নাথ তদন্ত করেন। কিন্তু এর ফলাফল নওগাঁ জেলা ট্রাক ট্যাংকলড়ী ও কাভার্ডভ্যান পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন এ পর্যন্ত পায়নি।
পরবর্তীতে সাপাহার থানার লোড পয়েন্ট অফিসের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনের পর থেকে ২৬৫০ সংগঠনের সদস্যদেরকে মারপিট, হুমকি, নির্যাতনসহ নানা সময় সংগঠনের কার্যক্রমে বাধা প্রদান করে। এ বিষয়ে সাপাহার থানায় ২৬৫০ সংগঠন অভিযোগ করলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গত ১৮ মে উভয় সংগঠনের শ্রমিকসহ জেলা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ নিয়ে এক বৈঠকের আহ্বান করেন।
বৈঠকে ২৬৫০ সংগঠনের সদস্যরা, নওগাঁ জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়ন ২৩৮ এর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক ও তাদের ছায়া সংগঠন ২৬৫৮ এর সাধারণ সম্পাদক, অর্থ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদককে দেখলে ২৬৫০ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দাবি করেন, ২০০৬ সালের শ্রম আইনের অধীনে কোন সংগঠন যদি রেজিস্ট্রেশন পেয়ে থাকে তাহলে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের আইন মেনে সাপাহার থানা লোড পয়েন্টের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার কাগজপত্র থানার কর্মকর্তার মাধ্যমে দেখাতে বললে তার বিভিন্নভাবে কালক্ষেপণ করতে থাকে। এক সময় থানার কর্মকর্তা সভা দীর্ঘ হওয়ার জন্য দুপুরের খাবারের বিরতি দেন। আর সন্ধ্যা ৭টায় পুনরায় কাগজপত্র দেখে সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন।
এ সময় ২৬৫০ এর সদস্যরা দুপুরের খাবার জন্য শ্রমিক নেতা মহরম আলীর বাসায় যাওয়ার পথে সাপাহার ডাক বাংলোর সামনে ২৬৫৮ ও ২৩৮ এর সদস্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে লোহার রড, লাঠিসোটা, তীর ধনুক, হাঁসুয়া নিয়ে সামনে ও পেছন থেকে তাদের উপর হামলা চালায়। এতে ১০/১২জন শ্রমিক মারাত্মক আহত হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় ২৬৫০ এর সাপাহার উপজেলা শ্রম কল্যাণ উপ-কমিটির নেতা আবুল হোসেন বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করলে আসামিদের গ্রেপ্তার না করে উল্টো ২৬৫০ সংগঠনের শ্রমিকদের নামে মিথ্যা কাউন্টার মামলা দায়ের করে ২৬৫৮ সংগঠন।
এরই প্রেক্ষিতে পুলিশ ২৬৫০ এর তিন শ্রমিককে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়। এর প্রতিবাদে ১৯ মে নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করলে জেলার সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফলে ২৬৫০ সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা গত শুক্রবার (২২ মে) সন্ধ্যায় সংগঠনের কার্যালয়ে জরুরী বৈঠক শেষে তিন দফা দাবি উত্থাপন করে। তাদের এ সকল দাবি মানা না হলে আগামী ৩০ মে সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নওগাঁ জেলায় কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন।
রাজশাহী বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের সহকারী পরিচালক আলমুতাজিদুল ইসলাম বলেন, আমরা দুজন এ বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত নিবেন।
সাপাহার থানার ওসি তারেকুর রহমান জানান, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। দুই পক্ষের চার আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর