বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনা নদীর চরগুলোতে রীতিমতো সবুজের বিপ্লব ঘটেছে। বিভিন্ন ফসলের সঙ্গে এবার চরে সোনালি আঁশের ফসল পাট চাষ হয়েছে। পাটের পাতা সবুজ হওয়ায় চরগুলো যেন সবুজ রঙের আল্পনায় সেজে উঠেছে।
ধুধু চরে পাট চাষ করে এখন ভাল ফলন পাওয়ার স্বপ্ন বুনছে নদী চরের পাট চাষিরা। সারিয়াকান্দিতে অধিকাংশ চরের জমিতে গম, মরিচ, কাউন, পিঁয়াজ, বাদাম, ভুট্টা আবাদ ভালো হয়ে থাকে। বাজারে পাটের ভাল দাম থাকায় এসব ফসলগুলো ঘরে তোলার পর চাষীরা পাট চাষে ঝুঁকে পড়েন।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর পাট চাষ হয়েছিলো প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমি। আর এবার চাষ হয়েছে ৭ হাজার ১৫ হেক্টর জমি।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের ময়ুরের চরের কৃষক বুলু মিয়া বলেন, গত বছর পাট চাষ করেন ৩ বিঘা জমিতে। পাটের দাম খুবই ভালো ছিলো। ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ৫ হাজার পাট মণ দরে বিক্রি করেছিলেন। পাটের এখন ভাল দাম পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। এ জন্য ৩ বিঘার স্থলে ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন তিনি ।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলার বাওইটোনার বাদশা বলেন, যমুনা নদীর চরে পাট চাষ করে এখন পর্যন্ত ভাল চারা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় পাট ও আগাছা তুলে ফেলে দেয়া হচ্ছে। তিনি আশা করছেন, এবার তিনি পাটের ভাল ফলন পাবেন।
এদিকে সদর ইউনিয়নের বাটি চরের কৃষক মানিক মিয়া বলেন, মাঝে মধ্যে হালকা বৃষ্টি হওয়ার কারেণে জমিতে পাট গাছগুলো দ্রুত বেড়ে উঠছে। পাটগাছগুলো প্রায় ৫ ফুটের মত লম্বা হয়েছে। চলতি মৌসুম পাটের আবাদের জন্য এখন পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করছে। তবে বন্যার পানি দেরিতে আসলে পাটের আবাদের বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান।
উপজেলার কর্নিবাড়ী ইউনিয়নের ইন্দুরমারা চরের পাটচাষী রিপন মিয়া জানান, প্রতি বছরে প্রায় ১৫০ হতে ১৭০ মণ করে পাট পেয়ে থাকেন। গেল বছর আগেই কম দামে সব পাট বিক্রি করে দেয়ায় খুব একটা আয় করতে পারেননি। তবে বর্তমান পাটের দাম যদি শেষ পর্যন্ত একই থাকে তাহলে এবার পাট বিক্রি করে লাভবান হবেন।
সারিয়াকান্দি উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কুদরত আলী বলেন, বন্যা যদি আগাম হয় তাহলে পাটগাছ পরিপক্ব হওয়ার আগেই চাষীদের পাটগাছ কর্তন করতে হবে। ফলে তারা বাম্পার ফলন পাবেন না। অপরদিকে বন্যা যদি একটু দেরিতে হয়, তাহলে কৃষকরা পরিপক্ব পাটগাছ কর্তন করতে পারবে এবং ভাল ফলন পাবে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল হালিম বলেন, প্রতি হেক্টর জমিতে ৬০ থেকে ৭০ মণ করে পাট উৎপাদন হয়ে থাকে। উৎপাদনে প্রতি বিঘায় খরচ হয় ৬ হাজার টাকার মতো। এবার প্রায় ২ হাজার ৩’শ চাষীকে বিনামূল্যে পাট বীজ দিয়ে পাট চাষে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এবার আবহাওয়া ও দাম ভালো থাকায় চাষীরা অধিক লাভবান হবে বলে আশা করেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা