প্রতি বছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ভালো দামে পশু বিক্রির আশায় থাকেন ছোট খামারিরা। এবারও সেই আশায় দিনাজপুর সদর উপজেলার উত্তর গোবিন্দপুরের আকবর আলী, শ্যামল ঘোষসহ অনেকেই ফ্রিজিয়ান ও শাহীওয়াল জাতের ষাঁড় পালন করেছেন। তবে করোনার এই সময়ে কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে চিন্তিত তারা। সঠিক মূল্য না পেলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানিয়েছেন।
ছোট দুটি পশু পালন থেকে শুরু করে সাত বছরে পাকা টিনশেড বাড়ি করেছেন খামারি আকবর আলী। দিনাজপুর সদরের গোপালগঞ্জ বাজারের পূর্বে উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামে তার বাড়ি। এখন অনেকের কাছে তিনি অনুকরণীয়। তবে করোনার এই সময়ে বাজার নিয়ে শঙ্কায় তিনি।
তার ছোট খামারে চারটি গরুর মধ্যে একটি বড় প্রিজিয়াম জাতের অস্ট্রেলিয়ান ষাঁড় রয়েছে। ষাঁড়টি কোরবানির সময়ে বিক্রির জন্য বড় করেছেন। নাম ‘ত্যাগ’। ২৩ মণ ওজনের এই ষাঁড়ের দাম ধরেছেন ১০ লাখ টাকা। এরই মধ্যে অনেকে তার এই ষাঁড়টি দেখার জন্যে বাড়িতে ভিড় করছেন।
খামারি আকবর আলী বলছিলেন, ২০১৩ সালের দিকে আমার সংসার চালানো কষ্টকর হলে মোটাতাজাকরণ করে বিক্রির জন্য দেশি দুটি গরু ৬৮ হাজার টাকায় কিনি। এরপর বড় করে বিক্রি করি। এরপর সাত বছর পার হলো। এই সময়ের মধ্যে প্রতিবারেই লাভ হওয়ায় মোটাতাজাকরণে আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। এরই মধ্যে পাকা টিনশেড বাড়ি করেছি। একটি বড় টিনশেড নির্মাণও শুরু করেছি। পুঁজি হয়েছে ১০ লাখ টাকা। তাদের উন্নত জাতের ঘাস, চক্কর, গমের ভূসি, খড়, ধানের গুড়া এসব দেশীয় খাবার দেই। এবার প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজাকরণ করে ৪টি গরু পালন করছি। এর মধ্যে ২৩ মণ ওজনের বড় প্রিজিয়াম ষাঁড়টি বিক্রির জন্য বড় করেছি। কোরবানির জন্য তৈরি ‘ত্যাগ’ নামের ষাঁড়টি তার একবছর বয়সে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। এখন তার বয়স আড়াই বছর। দাম ১০ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক নিয়মে প্রতিপালন করা হচ্ছে। এই ষাঁড়টি দেখতে অনেকে আসছেন। কিন্তু করোনার এই সময়ে কোরবানির বাজার নিয়ে শঙ্কায় আছি আমিসহ অনেক খামারি।
তবে চিন্তার তেমন কারণ নেই জানিয়ে দিনাজপুর জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. আশিকা আকবর তৃষা বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবে গত বছর থেকে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরিচালনায় চালু হয়েছে দিনাজপুর অনলাইন পশুর হাট। এই হাট থেকে গতবার ৩ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার টাকার গবাদিপশু বিক্রি হয়। এবারও এই অনলাইন হাট থেকে আরও বেশি গবাদিপশু বিক্রি হতে পারে।
দিনাজপুর জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায়, জেলায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ২৬৮টি। এবার জেলায় ৫৮হাজার ৫৫ জন খামারি উৎপাদন করেছেন ১ লাখ ৯৮ হাজার ৭৮৩টি গরু-মহিষ-ছাগল-ভেড়া, যা চাহিদার চেয়ে ৫৪ হাজার ৫১৫টি বেশি।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ