চাচিকে পছন্দ করতেন মির্জা শামীম হাসান (৩১) নামের এক যুবক। বিষয়টি তার চাচি জানতে পেরে তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তার চাচি বগুড়ার একটি বেসরকারি অফিসে কর্মরত, চাচা ঢাকায়। চাচিকে বাগে আনতে না পেরে তাকে হেয় করতে বগুড়া শহরের সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের কাছে শতাধিক মেইল পাঠান ওই যুবক। ভুয়া ইমেইল আইডি তৈরি করে মেইলে তার চাচির নাম-ছবি ও চারিত্রিক বিষয়ের মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক কথা তুলে ধরে জঘন্য ভাষায় একটি মেইল পাঠান। মেইল পাঠানোর ভুয়া ইমেইল আইডি ডিলিট করে ফেলেন।
বিষয়টি চাচির নজরে আসে। এরপর ভুক্তভোগী চাচি বেনামে পাঠানো মেইলের বিষয়ে চিন্তায় পড়েন এবং গত ২৫ জুন বগুড়া সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে জেলা গোয়েন্দা বিভাগের সাইবার টিম কাজ শুরু করে। তদন্ত করে বৃহস্পতিবার রাতে সাইবার টিমের সদস্যরা মির্জা শামীন হাসানকে রাজধানী ঢাকার হাতিরঝিল থানা এলাকার পশ্চিম রামপুরার ভাড়া বাসা গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন ও একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার মনিটরসহ উদ্ধার করা হয়। কম্পিউটারে আরও ৯৬টি ভুয়া ইমেইল আইডির সন্ধান পায় পুলিশ।
মির্জা শামীম হাসান বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার জোড়গাছা এলাকার মির্জা সেলিম রেজার ছেলে।
শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁঞা সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পুলিশ সুপার জানান, সদর থানা থেকে অভিযোগটি সাইবার পুলিশের কাছে দেওয়া হয়। সাইবার পুলিশ বগুড়ার এক্সপার্ট টিম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভুয়া ইমেইলের পেছনে লুকিয়ে থাকা আসল ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়। তদন্তে জানা যায়, ভুক্তভোগী নারীর নিকট আত্মীয় শামীম এই জঘন্য কাজটি করেন । শামীম ইমেইল পাঠানোর সাথে সাথে ইমেইল একাউন্টটি ডিলেট করে দেন। শামীমের উদ্দেশ্য ছিল এভাবে মেইলের কারণে তার চাচা-চাচির সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেলে সেই সুযোগে তিনি চাচিকে তার কাছে ঢাকায় নিয়ে যাবেন। আসামির জব্দকৃত ডিভাইসগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, আসামির ডিভাইসে এজাহারে উল্লেখিত ইমেইল ও সেই ইমেইল হতে বগুড়া জেলার সাংবাদিকদের ইমেইলে তার চাচির চারিত্রিক বিষয়ের মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক কথাবার্তা লিখে মেইল পাঠান।
সংবাদ সম্মেলনে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক, সাইবার পুলিশের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক এমরান মাহমুদ তুহিন উপস্থিত ছিলেন।
সাইবার পুলিশের ইনচার্জ এমরান মাহমুদ তুহিন জানান, গ্রেফতার শামীম কখনো ইঞ্জিনিয়ার, কখনো আইনজীবী, কখনো লেখক, আবার কখনো সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন। সমাজের অনেক বড় বড় পদের লোকজনের সাথে তার অবাধ চলাফেরা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে বলেও তিনি দাবি করেছেন। তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ