লাল হলুদ শাড়ি আর খোপায় ফুল গেঁথে রঙিন সাজে বাদ্যের তালে নাচে-গানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী উরাওঁ সম্প্রদায় উদযাপন করেছে কারাম উৎসব।
দিনাজপুরের সুইহারী খালপাড়ায় আদিবাসী পল্লীতে শুক্রবার সারারাত চলে এ উৎসবের। অপসংস্কৃতির বেড়াজাল থেকে বের হয়ে নিজেদের ঐতিহ্য মেলে ধরতে এ আয়োজন।
সকাল থেকে নাচে-গানে আসতে শুরু করে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর নারী-পুরুষ মাদল আর মন্দিরার শব্দের সাথে দলবদ্ধ পথনৃত্য।তাদের নিজস্ব ভাষায় গাওয়া গান আর ছন্দময় নাচে অংশ নেয় তরুণ-তরুণী আর বৃদ্ধরা। সমতল ভূমির এ সম্প্রদায় নাচে- গানে তুলে ধরে তাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে। বৈচিত্র্যপূর্ণ এ অনুষ্ঠান উপভোগ করতে ঢল নামে নানা-পেশার মানুষদের।
কারাম উৎসবটি উরাওঁদের বছরের সবচেয়ে বড় পর্ব হিসেবে বিবেচিত। কারাম উৎসবটি ভাদ্র (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসের একাদশী দিনে করা হয়ে থাকে। এ উৎসবটি সাধারণত যখন পৃথিবীতে মৌসুমি বায়ু চরমে থাকে এবং ধানের গাছগুলো মাঠে দাঁড়িয়ে থাকে ও ধানের গাছ কান পর্যন্ত বড় হয়নি এ সময় করা হয়ে থাকে।
এ উৎসবটি মূলত ধান কাটার আগে এবং অবসর সময়ে “প্রচুর ফসল উৎপাদনক্ষম উৎসব” ও শস্য মাঠে দাঁড়ানোর শক্তি যোগানোর জন্য করা হয়ে থাকে। কারাম প্রধানত তিন ধরনের করা হয়-(১) জিতিয়া কারাম-যা ব্যক্তিগত পর্যায় করা হয়, (২) দাশ কারাম-যা গ্রামের সকলে মিলিতভাবে উদযাপন করে থাকে এবং (৩) রা-জি কারাম বা রাইজ কারাম-যা এলাকার সকলের সমন্বয়ে করা হয়ে থাকে।
কারামে গ্রামের তরুণ-তরুণীদের সুসন্তান লাভের জন্যও প্রার্থনা করা হয়। কারাম উৎসবের প্রধান অনুষ্ঠানটি কারাম গাছের তিনটি ডাল কেটে গ্রাম্য আখড়ার মাঝখানে কারাম রাজা হিসেবে গ্রামের নারীদের দ্বারা পোতা হয়। ডালের চতুর্দিকে বসে কারামের কাহিনী শোনা হয়। এরপর গ্রামের ছেলে-মেয়েরা কারাম রাজার চর্তুদিকে সারা রাত ধরে নাচে। পরের দিন সকালে তরুণীরা বিশেষভাবে গোজানো জাওয়া পুঁপ তাদের ভাই ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিতরণ করে। সকালের সূর্যের তাপ বাড়ার সাথে সাথে পাহান কারাম ডালগুলো তুলে কাছাকাছি পুকুর বা নদীতে সম্মানের সাথে ভাসিয়ে দেয় এবং পারিবারিক ভোজে অংশগ্রহণ করে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন