বিভিন্ন অজুহাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় করের বোঝা ও ফি বাড়ানো হলেও তেমন একটা বাড়েনি নাগরিক সুবিধা। অন্যদিকে ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ রাস্তাঘাট ভাঙাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ঘুরপাক খাচ্ছে এই পৌরসভা। এদিকে, করোনা সংকট চলাকালে এবার কোনোরকম গণশুনানি বা প্রচারণা ছাড়াই প্রতিটি বাড়ির পৌরকর কয়েক’শ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ১৯০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান আয়তন ২৪ দশমিক ৬০ বর্গকিলোমিটার। ২ লাখ ৬০ হাজার জনসংখ্যার ‘ক’ শ্রেণির এই পৌরসভায় ওয়ার্ড সংখ্যা ১৫টি এবং হোল্ডিংধারীর সংখ্যা ৩৮ হাজার ১৬৫টি। কিন্তু ২ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড এবং ৩, ৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আংশিক অংশ ছাড়া বাকি ওয়ার্ডে আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া তেমন একটা লাগেনি। প্রতিনিয়ত হোল্ডিংধারীর সংখ্যা বাড়ছে।
কিন্তু বিভিন্ন অজুহাতে পৌর কর, বিভিন্ন ফিসহ পানির বিল বাড়ানো হলেও নেই তেমন নাগরিক সুবিধা। নির্মিত ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে মশার উপদ্রব। অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠছে বিভিন্ন স্থাপনা। তারপরও সেইসব স্থাপনার কোনো জায়গা ছাড়া হচ্ছে না, আর সড়কের উপর রাখা হচ্ছে নির্মাণ সামগ্রী। এতে করে ফয়দা লুটছে পৌরসভার কতিপয় ব্যক্তি।
অন্যদিকে, অপরিকল্পিতভাবে পৌর এলাকার বিভিন্নস্থানে সড়কের পাশে শাক-সবজির বাজার বসছে। সে এলাকায় কাঁচা বাজারের উন্নয়নে নেই কোনো পরিকল্পনা, পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকায় যেখানে-সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য ওয়ার্ডগুলোতে অপ্রশস্ত রাস্তা, নেই কোনো উদ্যোগ।
এলাকার গুরুত্বপূর্ণ অনেক রাস্তাই এখনো চলাচলের অনুপযোগী। এমনকি অধিকাংশ প্রধান প্রধান সড়কে সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পরই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকছে এবং সেসব এলাকায় অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এলাকার সচেতন মহল মনে করেন, বিরোধী পক্ষের মেয়র হওয়ায় এলাকার উন্নয়ন তেমন নেই। প্রতিনিয়তই এ পৌরসভাটি কাঙ্খিত উন্নয়নে ব্যর্থ হচ্ছে।
পৌর এলাকার বাবুল হোসেন, আজিজ রহমানসহ কয়েকজন জানান, শত বছর পেরিয়ে যাওয়া এই পৌরসভা গড়ে তুলতে সুদূরপ্রসারী মহাপরিকল্পনা ও নকশা করা দরকার, যা এখানে অনুপস্থিত। অথচ পরিকল্পনা মতো এ শহরটি গড়ে উঠাতে পারলে একটি পর্যটন শহর হয়ে উঠতে পারত। এদিকে, করোনাকালীন কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই পৌর কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। কারো বকেয়া দেখিয়ে ২০০ থেকে ১ হাজার, কারো এক লাফে ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার বাড়ানো হয়েছে।
শহরের গাবতলা মোড় এলাকার জাফরুল আলম জানান, আগে তার হোল্ডিং ট্যাক্স ছিল ৭ হাজার ৮০০ টাকা। সেটি বাড়িয়ে ৫১ হাজার ৭০০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া মসজদিপাড়া মহল্লার একজন জানান, তার বাড়ির পৌরকর ছিল ৪০০ টাকা, বর্তমানে বাড়িয়ে তা করা হয়েছে ২৬০০ টাকা। তিনি কখনও তার বাড়ি ভাড়াও দেননি অথচ তার বাড়ির পৌরকর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
কোন রকম ঘোষণা না দিয়ে পৌরকর অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সাবেক মেয়র মাওলানা আব্দুল মতিন বলেন, কোনো রকম শুনানি ছাড়া পৌরকর বৃদ্ধির কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু বর্তমান মেয়র আইনকে তুচ্ছ করে কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা নিময় বহির্ভূত।
পৌরসভার বর্তমান মেয়র জামায়াত নেতা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, যাদের অবকাঠামোগত পরিবর্তন হয়নি, তাদের ক্ষেত্রে কর বাড়ানো হয়নি। আর যেসব ভবনের অবকাঠামো পরিবর্তনের পাশাপাশি বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়েছে সেক্ষেত্রে অ্যাসেসমেন্ট করে কর নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, নিয়ম মেনেই প্রতি ৫ বছর পরপর অ্যাসেসমেন্ট করা হয়। আগে যেসব হোল্ডিং গ্রহীতার টিনের ঘর ছিল, বর্তমানে সেখানে পাকা ইমারত করেছেন। তাদের ক্ষেত্রে নিয়ম মেনেই করারোপ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আইনের বরখেলাপ কিংবা গ্রাহকদের ওপর বাড়তি চাপ করা হয়নি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই