লক্ষ্মীপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বাংলায় শারদীয়া দুর্গোৎসবের পর আর্শ্বিন মাসের শেষে পূর্ণিমা তিথিতে লক্ষ্মীপূজার আরাধনা করা হয়। এই পূজা উপলক্ষে শুক্রবার থেকে দুই দিনব্যাপী কুজাইল বাজারে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়।
স্থানীয়রা তাদের শত বছরের পুরনো ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন করে থাকেন। মেলায় দোকান থাকে কয়েক দিন। এছাড়াও অনুষ্ঠিত হয় বউ মেলার।
জানা যায়, উপজেলার কাশিমপুর রাজবাড়ীর রাজা রাজবাহাদুর শ্রী অন্নদা প্রসন্ন লাহিড়ীর রাজত্ব পরিচালনার আগে থেকে লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ঐতিহ্যবাহী এ মেলার বিশেষ আর্কষণ লক্ষ্মী প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে ছোট যমুনা নদীতে নৌবহর।শুক্রবার দুপুরের পর থেকে জেলার রাণীনগর, আত্রাই, নওগাঁ সদরসহ কয়েকটি উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ নৌকায় চড়ে আসতে থাকে। পাশাপাশি মেলা ও নৌবহর উপভোগ করার জন্য নৌকায় ঘুরে বেড়ায় অন্যান্য ধর্মের মানুষও। সাউন্ড বক্স, মাইক আর ঢাকের তালে তালে নৌকায় বিনোদন প্রেমীদের নৃত্যে মুখরিত হয়ে উঠে এই ছোট যমুনা নদী। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মিলনমেলায় পরিণত হয় নদীর দুইপাড়। প্রায় শতাধিক নৌকা নদীতে নৌবহরে মেতে উঠে। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এরপর প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় নদীতে।
এ মেলা উপলক্ষে এলাকার গ্রামের বাড়ি বাড়ি আত্মীয় স্বজনদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠে। ধুম পড়ে যায় ভালো রকমের খাওয়ার। কারণ অন্যান্য অনুষ্ঠানের সময় মেয়ে ও জামাইসহ আত্মীয়-স্বজন আসতে না পারলেও এ মেলায় বাড়িতে বেড়াতে আসেন। জামাইয়েরা মেলা থেকে বড়ো বড়ো মাছ, মিষ্টি, জিলাপিসহ হরেক রকমের খাবার তাদের শ্বশুর বাড়িতে কিনে নিয়ে যান। মেলার দ্বিতীয় দিন শনিবার হবে বউ মেলা। বউ মেলায় বিশেষ করে নারীদের কসমেটিকস দোকানগুলোতে উপচেপড়া ভিড়। আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের শত শত নারীদের বউমেলায় আগমন ঘটে।
কুজাইল গ্রামের শান্ত কুমার বলেন, দূর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় উৎসব হলেও আমাদের এখানে লক্ষ্মীপূজার আনন্দটা বেশি হয়। লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে এটা আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের একটা মেলা। এ সময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয় স্বজনের আগমনে যেন মুখরিত হয়ে উঠে। এদিন বিসর্জনের জন্য নদীতে নৌকায় করে প্রতিমা নিয়ে বিশাল নৌবহর শুরু হয়। পাশাপাশি থাকে আনন্দ উপভোগ করার নৌকাও। এরপর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে গ্রামের মেলা দেখা শুরু হয়।
মেলা কমিটির উপদেষ্টা সাইদুর রহমান বলেন, শত বছরের পুরনো ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তবে লক্ষ্মীপূজার এ মেলা উপলক্ষে আগে থেকে কোন প্রকার প্রচার প্রচারনার দরকার হয় না। সবাই এ মেলার বিষয়ে অবগত থাকেন। যার কারনে লক্ষ্মীপূজার দিনে দর্শনার্থীদের আগমনের কোন কমতি থাকে না। মেলা কমিটির সভাপতি ছায়ের আলী বলেন, বিভিন্ন উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ লক্ষ্মী প্রতিমা নিয়ে শতাধিক নৌকা ছোট যমুনা নদীতে নৌবহর শুরু করে। নৌবহর দেখতে নদীর দু'পাড়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়ে মানুষের যেন মিলন মেলায় পরিনত হয়। তবে এক্ষেত্রে এলাকাবাসীর পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন যথেষ্ট সহযোগিতা করে থাকেন।
বিডি প্রতিদিন/এএম