২৫ অক্টোবর, ২০২১ ১৮:০৩
গলাচিপা ইউপি নির্বাচন

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সতর্ক করে দলীয় চিঠি

গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সতর্ক করে দলীয় চিঠি

তৃতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচনে পটুয়াখালীর গলাচিপার ৮টি ইউনিয়নের  ৬টিতেই চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক সন্তোষ কুমার দে। তিনি জানান, গত ২৪ অক্টোর উপজেলা আওয়ামী লীগ এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গলাচিপা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে তৃতীয় ধাপে ৮টি ইউনিয়নের নির্বাচন আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে দ্বিতীয় ধাপে ৪টি ইউপির নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। তৃতীয় ধাপের এ নির্বাচনে ৮টির মধ্যে ৬টিতেই আওয়ামী লীগের একাধিক দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আর এ নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রার্থীর বিজয়কে নিশ্চিত করতে বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানায় উপজেলা আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থীরা নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসবেন না বলে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করেছেন।

গলাচিপার চরকাজল, চরবিশ্বাস, গলাচিপা সদর, পানপট্টি, ডাকুয়া, কলাগাছিয়া, বকুলবাড়িয়া ও গজালিয়ায় তৃতীয় ধাপের এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে শুধু গলাচিপা সদর ও গজালিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই।

চরকাজল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী চরকাজল সাংগঠনিক ইউনিয়ন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহিন গাজী চেয়ারম্যান পদে কাউন্সিলে অংশগ্রহণ করে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এ বিষয়ে মো. শাহিন গাজী বলেন, দল এবারও সাইদুর রহমান রুবেলকেই মনোনয়ন দিয়েছেন। কিন্তু সাধারণ নেতা-কর্মী ও ভোটারের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা নেই। তিনি দুই বার নির্বাচিত হয়ে এলাকার কোন উন্নয়ন করতে পারেননি। উল্টো দখল, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন।

অপর দিকে একই ইউনিয়নের উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. নিজাম উদ্দিন মোল্লার পিতা চরকাজল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান মোল্লা এবারও নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।

এদিকে এ বিষয়ে চরকাজল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. সাইদুর রহমান রুবেল বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। উল্টো উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন মোল্লা তার বাবাকে দিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করাচ্ছেন এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের তার বাবার পক্ষে কাজ করার  জন্য প্রভাব বিস্তার করছেন।

এ প্রসঙ্গে গলাচিপা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. নিজাম উদ্দিন মোল্লা বলেন, বাবাকে দিয়ে নির্বাচন করানোর কোন পরিকল্পনা ছিল না। আমরা পারিবারিক ও স্থানীয় জনগণ চরকাজল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবর রহমানকে চেয়ারম্যান পদে স্থানীয় কাউন্সিলে অংশগ্রহণ করিয়েছি। কিন্তু কেন্দ্রীয়ভাবে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এর পর স্থানীয় জনগণ আমার বাবাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করেছেন। এর পরেও আমি বাবাকে নিষেধ করলে তিনি না শোনায় আমি গলাচিপার বাইরে ঢাকা চলে যাই। আমি কাউকে নির্বাচনে প্রভাবিত করিনি। আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।

এছাড়া চরবিশ্বাস ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য মো. রাজা মিয়া। তিনি বলেন, আমি জনগণের প্রার্থী। দল কী সিদ্ধান্ত নিবে তা দলের ব্যাপার। আমার অবস্থান থেকে এক চুলও নড়বো না।

এদিকে কলাগাছিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলে আমি সর্বাধিক ভোট পেয়ে প্রথম হয়েছি। দলীয় মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে আবেদন করি। কিন্তু আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এতে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আমাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করেছে। আমি বিজয়ী হলে দল অবশ্যই আমার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

পানপট্টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. মাসুদ রানা বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলে আমি সর্বাধিক ভোট পেয়ে প্রথম হয়েছি। আমি ও আমার পূর্ব পূরুষ আওয়ামী রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত এবং তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাই সাধারণ মানুষের দাবি উপপেক্ষা করতে পারিনি।

অপরদিকে গলাচিপা সদর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন টুটু বলেন, দলীয় কিছু দুষ্কৃতিকারীদের জন্য গত ইউপি নির্বাচনে আমার পরাজয় হয়েছে। আশা করছি, এবছর সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সক্রিয়ভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করে আমাকে বিজয়ী করবেন।

এ বিষয় গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সর্দার মু. শাহ আলম বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের নিয়ে মিটিং করা হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ অক্টোবর বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের দলীয় চিঠির মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছে। আগামী ২৬ অক্টোবরের মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার আহ্বান করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক সন্তোষ কুমার দে বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কেউ ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 


বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর