২৬ অক্টোবর, ২০২১ ২০:৫৪

বৌলাই ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৌলাই ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন

বৌলাই ইউনিয়নে আওলাদ হোসেনের মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় বৌলাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওলাদ হোসেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে তার এই মনোনয়ন নিয়ে। সবাই বলছেন, তার দাদা ছিলেন একজন রাজাকার। বিভিন্ন কাগজপত্র ও তথ্যাদিতে দেখা যাচ্ছে, আওলাদ হোসেনের দাদা আমির আলী ছিলেন একাত্তরের তালিকাভুক্ত দালাল কমিটির সদস্য।

এমন একজন রাজাকার পরিবারের সদস্যকে নৌকার মনোনয়ন দেওয়ায় কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 

গত ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড বরাবর লিখিত আবেদনে আওলাদ হোসেনকে মনোনয়ন না দেওয়ার দাবি জানান কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়।

রাজাকারের নাতি আওলাদ হোসেনের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের পরিচ্ছন্ন যেকোনো রাজনীতিবিদকে নৌকার মনোনয়ন দেওয়ার দাবি তুলেছেন এলাকাবাসী। 

এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপে রাজাকারের নাতি আওলাদ হোসেনের নৌকার মনোনয়ন বাতিলের দাবি করেছেন তারা।

আওয়ামী লীগ করে লাভ কী?

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘রাজাকারের নাতি যদি ভুয়া শহীদ পরিচয় দিয়ে নৌকা মার্কা পায় তাহলে আমরা আওয়ামী লীগ করে কী লাভ?’

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বুরহান বলেন, ‘আমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের রেজ্যুলেশনে যখন শহীদ ব্যবহার করিনি তখন জেলা আওয়ামী লীগের ১ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও আওলাদ হোসেন আমাকে জোর করে আগের রেজ্যুলেশন কেটে নতুন রেজ্যুলেশনে তার বাবার নাম শহীদ নিজের হাতে লেখেন।’

বৌলাই ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা মো. রাজ্জাক বলেন, ‘আওলাদ হোসেনের দাদা হাজী আমির আলী শান্তি কমিটি চেয়ারম্যান ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ, দেশ আনছি আমরা। মনোনয়ন রাজাকার পরিবারকে দেবেন না। চিন্তা-ভাবনা করে দলীয় মনোনয়ন দেবেন।’

আরেক মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমির আলী দালাল ছিলেন। দালাল আমির আলীর নাতি আওলাদ হোসেনের মনোনয়ন বাতিলের দাবি স্বাধীনতার পক্ষের জনগণের।’

যা বললেন আওলাদ হোসেন

রাজাকার ও শহীদ ইস্যুতে জানতে চাইলে আওলাদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। তিনি অত্র ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন।’

তিনি কি শহীদ? কিন্তু কোনো কাগজপত্র তো নেই। এ প্রশ্নে আওলাদ হোসেন বলেন, ‘এলাকাবাসী সবাই জানেন, আমার বাবা শহীদ হয়েছেন। ১৯৭১ সালের ৩১ জুলাই পাকিস্তানি বাহিনী তাকে মেরে ফেলে। এর আগে তাকে তিন দিন তারা নির্যাতন করে।’ 

আর দাদার বিষয়ে কী বলবেন? তিনি বলেন, ‘সেসময় আমার দাদা ছিলেন ৭৫ বছর বয়সের। তখন কীভাবে তিনি রাজাকার হতে পারেন?’

তার নামতো রাজাকারের তালিকায় রয়েছে? তিনি বলেন, ‘সেটা কোনো রাষ্ট্রীয় কাগজ কি না, আমি জানি না।’

আওলাদ হোসেন আরও বলেন, ‘মনোনয়ন না পেয়ে প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

এদিকে, মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও লেখক  ড. জাহাঙ্গীর আলম জাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওলাদ হোসেনের বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তার দাদার নাম রাজাকারের তালিকায় থাকলে থাকতেও পারে। কারণ, সেসময় তো অনেকে মুসলিম লীগ করতো এবং অনেকেই শান্তি কমিটিতেও ছিলেন।’

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর