পাবনার ঈশ্বরদীতে আগামী ২৮ নভেম্বরের অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাত ইউনিয়নের ৬টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে একটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হচ্ছেন। তিনি পাকশী ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন অফিস সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আকাল উদ্দিন সরদারের (নৌকা) বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন পাবনা-৪ এমপি নুরুজ্জামান বিশ্বাসের ঘনিষ্ট আত্মীয় এমলাক হোসেন বাবু। একই সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী বাবু মুলাডুলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল খালেক মালিথার মেয়ে জামাই। খালেক মালিথা এবার দলীয় নৌকা প্রতিকে মুলাডুলি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন।
লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নে নৌকা প্রতিকে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর ছোট ভাই লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান শরীফ। তার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক মোল্লা।
সলিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাবলু মালিথা দলীয় প্রার্থী। তার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল কাদের, দাশুড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান বকুল সরদার দলের মনোনিত প্রার্থী হলেও ওই কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি শামসুল আলম বাদশা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। মুলাডুলি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী আব্দুল খালেকের বিপক্ষে কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুর রহমান ফান্টু মন্ডল বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।
সাঁড়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান দলীয় প্রতিক পেলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন দলের মনোনয়ন বঞ্চিত পাবনা জেলা যুবলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক জুয়েল চৌধুরী। এদিকে সাত ইউনিয়নের ছয় ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ইউনিয়ন পাকশীতে দলীয় একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা পড়েছে।
দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের বিদ্রোহী প্রার্থী আনিসুল হক মোল্লা জানান, ২০১৬ সালে তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলু আমার মনোনয়ন বাতিল করে অবৈধভাবে পাবনা জেলা থেকে তার ভাই আনিস উর রহমান শরীফকে মনোনয়ন প্রদান করেন। আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছিলো। জনগণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছিলো। এবার দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের চাপে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছি। সুষ্ঠু ভোট হলে আমার বিজয় নিশ্চিত বলেও দাবী করেন আনিস মোল্লা।
মুলাডুলি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুর রহমান ফান্টু মন্ডল অভিযোগ করে জানান, স্থানীয় এমপি নুরুজ্জামান বিশ্বাসের আন্তরিক সহযোগিতার কারণে তাঁর স্ত্রীর বড় ভাই আব্দুল খালেক মালিথা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের দাবীর মুখে প্রার্থী হয়েছি।
সলিমপুর ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল কাদের অভিযোগ করে জানান, বর্তমান চেয়ারম্যান কমিটির সভাপতি দলীয় নেতা কর্মী থেকে বিচ্ছিন্ন। জামায়াত বিএনপির সঙ্গে আতাঁত করে চলেন। জামায়াত নেতাকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় বিতর্কিত কর্মকান্ড করেছেন। দলের নেতাকর্মীদের দাবীর কারণে প্রার্থী হয়েছি।
দাশুড়িয়া ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী শামসুল আলম বাদশা সরদার অভিযোগ করে জানান, বর্তমান চেয়ারম্যান বকুল সরদারকে আত্মীয় করণের মাধ্যমে বারবার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় সহযোগিতা করা হচ্ছে। এর কারণে দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতারা দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এমনকি দলীয় নেতাকর্মীরা চেয়ারম্যানের নিকট থেকে দলীয় সুযোগ সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এই কারণে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সমর্থন ও দাবীতে প্রার্থী হয়েছি।
সাঁড়া ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী জুয়েল চৌধুরী অভিযোগ করে জানান, বর্তমান চেয়ারম্যান অতীতের নির্বাচনে দল ও নৌকা বিরোধী নানা কর্মকান্ড চালিয়ে বিতর্কিত হয়েছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের লাঞ্ছিত করেছেন। অবজ্ঞা করেন। এই কারণে স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভালবাসায় প্রার্থী হয়েছি।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর