ঢাকার ধামরাইয়ে বিবাহিত এক মেয়ের সাথে কথা বলার অপরাধে এক যুবককে রাতভর নির্যাতন করা হয়েছে। এলাকার কয়েক বখাটে ওই বিবাহিত মেয়ে ও যুবককে একটি বাড়িতে আটক রেখে এ নির্যাতন চালায়। এসময় নির্যাতনের শিকার ওই ছেলের বাবার কাছে এক স্থানীয় ইউপি সদস্য দেড় লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দেয়ায় রাতভর নির্যাতনের পর ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হয় ওই যুবককে।
এ ঘটনায় আজ সোমবার সকালে ব্যাপক তোলপাড়ের সূষ্টি হয়েছে। তবে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার সন্ধ্যায় সূয়াপুর ইউনিয়নের শিয়ালকোল মোড়ে। ধামরাই থানা পুলিশ জানিয়েছেন এ ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, ধামরাইয়ের সুয়াপুর ইউনিয়নের ঈশানগর গ্রামের বাবুল হোসেনের ছেলে গত শনিবার সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় পাশের গ্রামের এক বিবাহিতা মেয়ে তার ভাড়া করা বাড়িতে নিয়ে শহিদুলের কাছে কিছু টাকা ধার চান। এ সুযোগে স্থানীয় ইউপি সদস্য মেম্বর মোতালেব হোসেনের মেয়ের জামাই দুলালসহ কয়েকজন বখাটে শহিদুলসহ ওই মেয়েকে আটক করে বিভিন্ন অশালিন মন্তব্য করতে থাকেন। এতে সেখানে অনেক লোকজন জড়ো হয়। ওই সময় মোতালেব মেম্বার গিয়ে হাজির হন ওই বাড়িতে। ডেকে আনেন শহিদুলের বাবা বাবুল মিয়াকে। এক পর্যায়ে মুক্তিপণ হিসেবে শহিদুলের বাবার কাছে দেড় লাখ টাকা দাবি করে মোতালেব ও তার মেয়ের জামাইসহ ভাতিজারা। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকার করায় শহিদুলকে মারধর করতে থাকে। চোখের সামনে ছেলেকে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিরুপায় হয়ে দাবিকৃত টাকা দিতে স্বীকার করেন বাবুল হোসেন। তবে তাৎক্ষনিক দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় সারারাত তাদের জিম্মি করে রাখে মেম্বর মোতালেব। রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ভোরে স্থানীয় চেয়ারম্যানের বাড়িতে গিয়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা মেম্বরের হাতে দেয়ার পর ছেড়ে সে ওই যুবককে ছেড়ে দেয়।
এ বিষয়ে বাবুল হোসেন মনে কষ্ট নিয়ে বলেন, পরিচিত এক মেয়ের সাথে কথা বলায় আমার ছেলেকে আটকিয়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে নিল। তিনি মেম্বরের বিচার দাবি করেন। তবে ভয়ে মামলা করতে সাহস পাচ্ছেন না বলে জানান তিনি।
তবে অভিযুক্ত মোতালেব হোসেন মুঠোফোনে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
সূয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন বলেন, আমার বাড়িতে ছেলের বাবা বাবুল হোসেন ও মেম্বর মোতালেব আসছিল মিমাংসার জন্য। টাকা লেনদেনের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
তবে চেয়ারম্যানের ছেলে আবদুল হালিম বলেন, মোতালেব মেম্বরের কাছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়েছে বলে শুনেছি।
ইউপি সদস্য ঈশাননগর গ্রামের জয়নাল আবেদীন বলেন, আমি মিমাংসাতে ছিলাম। ছেলের বাবাকে এক লাখ টাকা দিতে বলেছিলাম। তবে মোতালেব মেম্বরের তা না মানায় তার কাছে এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা দিয়েছে বাবুল হোসেন।
এদিকে, ওই বিবাহিত মেয়েটি বলেন, শহিদুল আমার পূর্ব পরিচিত। তাকে আমার ভাড়া নেওয়া বাড়িতে নিয়ে কিছু টাকা ধার চেয়েছি মাত্র। এসময় স্থানীয় মেম্বর মোতালেব হোসেনের মেয়ের জামাই দুলালসহ কয়েক বখাটে এসে অশালীন ও অবান্তর কথা বলতে বলতে চিৎকার করতে থাকে। তারা আমার চরিত্র নিয়েও কথা বলেন। এক পর্যায়ে তারা শহিদুলকে মারধর করতে থাকে। এ বিষয়ে আমি কারো কাছে অভিযোগও দেয়নি। তবে শুনেছি আমাকে টাকা দেওয়ার কথা বলে শহিদুলের বাবার কাছ থেকে এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা নিয়েছে মোতালেব মেম্বার। কিন্তু আমাকে এক টাকাও দেয়নি।
এ বিষয়ে ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ আতিকুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমি জানি না। তবে ঘটনা সত্য হলে জড়িতদেও বিরুদ্ধে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ