বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার ইউনিয়নে ১০ টাকা কেজির খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণে দুই ডিলারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কার্ড ফেরত নিয়ে চাল দিচ্ছে না ডিলাররা, একজনের কার্ডে আরেক জনের ছবি ব্যবহার করে চাল উত্তোলন, এক বাড়িতে তিন ব্যক্তির নামে কার্ড হলেও প্রকৃত সুবিধাভোগীরা পাচ্ছেনা, ডিলারের সামনে সুবিধাভোগীর চাল কিনছেন কালোবাজারিরা ও চাল পেতে করতে হয় অপেক্ষা। মঙ্গলবার সকালে এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সুবিধাভোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জানা যায়, উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নের দমদমা গ্রামে সোমবার সকাল ৮টা থেকে চাল নেওয়ার জন্য লোকজন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও ডিলারের খোঁজ মিলে সকাল ১০টার পর। খবর পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সেখানে এসে ক্ষুদ্ধ সুবিধাভোগীদের শান্ত করেন। অপরদিকে হেলালিয়াহাটে সকাল থেকে চাল দেয়া শুরু হলেও অনেক সুবিধাভোগীরা চালের আশায় এলেও খালি হাতে ফিরতে দেখা গেছে। কারন ডিলার কারো কার্ড জমা নিয়েছে আবার কাউকে কাউকে কার্ড না দিয়ে মৌখিক ভাবে দেয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, বেশ কয়েকজন সুবিধাভোগীর চাল মাপজোখ করে দেখা গেছে ‘প্রতি ৩০ কেজির বস্তায় ৫০০-৬০০ গ্রাম চাল কম’ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া দমদমা গ্রামে চাল বিতরণ শুরু হওয়ার পর থেকেই ডিলারের সামনেই প্রকাশ্যে ওই গ্রামের জনৈক ভুট্টুকে চালগুলো কিনতে দেখা গেছে। এ নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে স্থানিয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে ভুট্টুকে উত্তম মাধ্যম দিয়ে ছেড়ে দেন।
তবে এসব বিষয়ে দমদমার চাল ডিলার আরিফুল ইসলাম ও হেলালিয়ার স্বপন হোসেনের সাথে কথা বললে তারা জানান, চাল বিতরনে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। সুষ্ঠুভাবে বন্টন করা হচ্ছে। যারা কালোবাজারে সুবিধাভোগীদের চাল কিনছেন তাদের কয়েক দফায় নিষেধ করা সত্বেও তারা চাল কেনা বন্ধ করছেন না। বিষয়টি প্রশাসন দেখবে।
সান্তাহার ইউপির প্রান্নাথপুর গ্রামের জাবেদ আলীর ছেলে সুরুজ হোসেন, পশ্চিম ছাতনী গ্রামের টিপু সুলতান ও সুমন হোসেন জানান, কয়েক বছর আগে আমাদের কার্ড প্রদান করা হয়েছিল। এরপর ২-৩ বার চাল কিনতে পেরেছি। হঠাৎ ডিলার ও গ্রাম পুলিশ আমাদের কার্ড জমা নেয়। পরের দফায় চাল নিতে গেলে তারা বলেন ‘তোমাদের চালের কার্ড বাতিল হয়ে গেছে'। তারপর থেকে আর চাল পাচ্ছিনা। তবে সম্প্রতি পশ্চিম ছাতনীর আজাদ হোসেন নামের এক সুবিধাভোগী এ বিষয় নিয়ে হট্টগোল সৃষ্টি করলে তাকে কার্ড ছাড়াই চাল দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তিনিও মাঝে মাঝে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।
সোমবার হেলালিয়া এলাকায় চাল নিতে আসা প্রান্নাথপুরের হিটলার রহমান ও আরজু বেগম অভিযোগ করেন, ৩০ কেজির চাল দেয়ার কথা থাকলেও সেখানে হিটলার পেয়েছেন ২৯ কেজি ৫১৬ গ্রাম এবং আরজু পেয়েছেন ২৯ কেজি ৪৮৫ গ্রাম। অর্থাৎ প্রতি কার্ডধারীরা প্রায় আধাকেজি করে চাল কম পাচ্ছেন। এদিকে চকজানগ্রামের এনামুল হক নামের এক ব্যাক্তির কার্ডে অন্য এক ব্যক্তি ছবি যুক্ত করে সেই ব্যাক্তি দেদারছে চাল উত্তোলন করছেন।
সান্তাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাহিদ সুলতানা তৃপ্তি জানান, কবে চাল দেয়া হবে দুই ডিলার তাকে নিজ থেকে কখনোই অবগত করেন না। তাদের ইচ্ছে মতো বিতরণ কার্যক্রম করে থাকেন। ভোগান্তির বিষয়ে মানুষ তাকেও অভিযোগ করেছেন। এজন্য সকল কার্ড তুলে যাচাই বাচাইপূর্বক আগামী দফায় স্বচ্ছতার সহিত চাল বিতরণ করবেন। এছাড়া দুই ডিলারের অস্বচ্ছতার ব্যাপারে ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে তাদের ল্যাইসেন্স বাতিলের জন্য আবেদন করা হবে বলেও জানান।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা কেএম গোলাম রাব্বানী জানান, সান্তাহার ইউপিতে দুই ডিলার ১৩৪৬ জন কার্ডধারী সুবিধাভোগীর মাঝে ১০ টাকা কেজি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণ করে থাকেন। দুই ডিলারের বিরুদ্ধে এখনো আমাদের কেউ অভিযোগ করেন নি। কালোবাজারে বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কার্ডধারীরা চাল বিক্রি করলে আমাদের করণীয় কিছুই নেই।
বিডি প্রতিদিন/এএ