পঞ্চগড়ে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে কার্ড নবায়নে টাকা লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। হতদরিদ্রদের মাঝে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় বিনা পয়সায় এসব কার্ড সরবরাহ করলেও অফিস খরচের নামে প্রতি কার্ড বাবদ ১শ থেকে ২শ টাকা নেয়া হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় কার্ডধারীদের কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট ডিলাররা এসব টাকা উত্তোলন করেছেন। আর মোটা অংকের এই টাকা পকেটে ঢোকানোর ব্যাপারে সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ও ডিলাররা পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ এমন প্রতিপাদ্য নিয়ে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে হতদরিদ্রদের মাঝে কম দামে চাল সরবরাহের উদ্যোগ নেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। এই কর্মসূচির আওতায় ৩০ টাকা কেজি দরে চাল কিনতে পারছেন দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের দেশের ৫০ লাখ পরিবার। সরেজমিনে দেখা যায় এই কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্রদের মাঝে কম দামে চাল সরবরাহের জন্য পঞ্চগড় সদর উপজেলায় ১৪ হাজার মানুষকে কার্ড প্রদান করা হয়। এই কার্ড নবায়নের জন্য প্রত্যেক কার্ডধারীর কাছে ১শ থেকে ২শ টাকা নেয়া হয়েছে। প্রতি কার্ড বাবদ ১শ টাকার অংকটা কম শোনালেও ভয়ভীতি দেখিয়ে ১৪ হাজার হত দরিদ্রের কাছ থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। এসব হতদরিদ্র মানুষ সারাদিনের আয় থেকেই এই টাকা প্রদান করেছেন।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় খাদ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত ডিলাররা এই টাকা আদায় করেছেন। উপকার ভোগীরা বলছেন অফিস খরচের নাম করে এই টাকা আদায় করেছেন ডিলাররা। প্রত্যেক ডিলারের আওতায় প্রায় সাড়ে ৫’শ উপকার ভোগী রয়েছেন। কার্ড প্রতি ১’শ টাকা হিসেবে কম করে ৫৫ হাজার অতিরিক্ত টাকা অবৈধভাবে আদায় করেছেন সংশ্লিষ্ট ডিলাররা।
হাড়ি ভাষা ইউনিয়নের পাহাড় বাড়ি এলাকার রাসেল কবির (৩৫) জানান, আমার কাছ থেকে কার্ড নবায়নের জন্য ১’শ টাকা নিয়েছে ডিলার। টাকা না দিলে নাম বাদ দেয়। তাই দিয়েছি। এই ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ডিলার আবু হোসেন জানান, কেউ ৫০ আবার কেউ ৩০ টাকা দিয়েছে। ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে আমার বড় ভাইকে দিয়েছি। বড় ভাই অফিসে দিয়েছে।
এদিকে কার্ড নবায়নের এই টাকা পকেটে ঢোকানোর ব্যাপারে পরস্পর বিরোধী অভিযোগ করেছেন উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ও ডিলাররা। নাম গোপন রাখার শর্তে এসব ডিলাররা বলছেন এই টাকা অফিসের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জহিরুল হককে দেয়া হয়েছে। অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদের বোর্ড অফিস বাজারের ডিলার নজরুল ইসলাম জানান, প্রত্যেক বরাদ্দের জন্য টিসিএফকে ( উপজেলা খাদ্যকর্মকর্তা) ১ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। আমি কার্ডের জন্য টাকা নেইনি। গত জানুয়ারী মাস থেকে এই কার্ড নবায়নের কার্যক্রম শুরু হয়।
অবশ্য এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা জহিরুল হক । তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। ডিলাররা নিলে নিতে পারে।
এমন অভিযোগ এখনো পাননি বলে দাবি করেছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা রেজাউল হক খন্দকার। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল