বগুড়ার শেরপুরে নারীদের আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে কারাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন শিশু, তরুণী ও নারীরা। প্রায় ৩০ জন দিয়ে এই প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। সমাজে নানা অবক্ষয় ও বখাটেদের উৎপাত রোধ, নারীদের যৌন হয়রানির শিকার রোধসহ শারীরিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধনে নারীদের এই প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। বারো থেকে পঁচিশ বছরের ত্রিশজন তরুণী এই প্রশিক্ষণে প্রথমবারের মত অংশ নিচ্ছেন।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলা সদর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে চলছে কারাতে প্রশিক্ষণ। এই প্রশিক্ষণে কিছু শিশু, কিছু তরুণী এবং কয়েকজ নারী রয়েছে। বাংলাদেশ শেশিনকাই সিতো-রিউ করাতে-দো এসোসিয়েশনের সহকারি প্রশিক্ষক এড. হালিমা খাতুন আত্মরক্ষার নানা কৌশল শেখাচ্ছেন। নিজেকে রক্ষায় তরুণীরাও সেই কৌশল রপ্তের চেষ্টা করছেন।
জানা যায়, 'ভবিষ্যতের জন্য যুব দক্ষতার রূপান্তর'-প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস উপলক্ষ্যে নারীদের আত্মরক্ষার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উইমেনস হ্যাভেন ফর হিউম্যানিটি সংস্থার সহযোগিতায় স্বপ্ন ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশান এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে। নারীদের প্রাথমিক আত্মরক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কোর্সের নাম দেওয়া হয়েছে ‘আপোষ নয়, আত্মরক্ষা’। এই উপজেলায় এমন উদ্যোগ এই প্রথম। সংস্থাটি প্রথমে জেলার শেরপুরের নারীদের এবং পরে জেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করবে। এই প্রশিক্ষণটি পর্যায়ক্রমে বগুড়ার প্রতিটি উপজেলায় এবং পরে দেশের সকল উপজেলায় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। টানা দুই মাস করে এই প্রশিক্ষণ প্রদান করে একেকজন নারীকে প্রাথমিক আত্মরক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। বিপদের সময় যেন সহজেই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পারে।
গত ১৫ জুলাই এই কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিনেন- শেরপুর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা বিজয় চন্দ্র দাস, কারাতে প্রশিক্ষক আমিনুল ইসলাম, স্বপ্ন ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশানের উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি শাহনাজ পারভীন, সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মাসুমা মরিয়ম এবং স্বেচ্ছাসেবক আমিনা মুমতারিন শ্রেয়া।
কারাতে প্রশিক্ষণরত নারীরা জানান, তারামুলত প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন মানসিক উৎকর্ষতার জন্য। সেটি যদি কখনো বিপদের সময় কাজে লাগে তাহলে ব্যবহার করা যাবে। তাছাড়া ইদানিং নারীরা যে ভাবে হয়রানীর শিকার হয় সে ভাবে প্রতিকার পায়না। কিন্তু শারীরিক প্রতিকারের কৌশল রপ্ত থাকলে হয়রানীকারিকে শায়েস্তা করা যাবে। নারীরা সচেতন হলে পথে ঘাটে বখাটে কমে যাবে। এই জন্য প্রতিটি নারীকে কারাতে প্রশিক্ষিত হতে হবে।
কারাতে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে প্রশিক্ষক এড. হালিমা খাতুন জানান, সমাজে নানা অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে। বখাটেদের উৎপাত রেড়েই চলছে। ফলে প্রতিনিয়তই নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এছাড়া কোনো মানুষ বিপদে পড়লে উপস্থিত লোকজন সাহস করে এগোতে চায় না। তাই শিশু থেকে বৃদ্ধ সবারই কারাতে শেখা উচিত। তাছাড়া এই কারাতে শেখা শারীরিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধনে ভালো ভূমিকা রাখে। কিন্তু এটা শেখার তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না বললেই চলে। সেই দিক বিবেচনায় স্বপ্ন ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশানের এই উদ্যোগ তরুণ-তরুণীদের মধ্যে উৎসাহ ও ব্যাপক সাড়া ফেলবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংগঠনের উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি শাহনাজ পারভীন জানান, নারীরা এখনো অনেক দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। তাই মেয়েদের নিজেদের আত্মরক্ষায় কারাতে প্রশিক্ষণ খুবই জরুরি। সেই দিক বিবেচনায় স্বপ্ন ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশানের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি চলমান থাকবে। প্রথম পর্যায়ে ত্রিশজনকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
স্বপ্ন ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনের সভাপতি মাসুমা মরিয়ম বলেন, নারীদের জন্য এই বিশেষ কোর্স আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে নারীদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করা ও আত্মরক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষণের প্রতি তাদের আগ্রহী করে তোলা। একজন অভিজ্ঞ পেশাদার কারাতে প্রশিক্ষক, বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে নারীদের নিজেকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা এবং প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন