ভোলায় ভরা মৌসুমেও মেঘনা-তেতুলিয়া নদীতে জেলেদের জালে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। ফলে হতাশা নিয়ে তীরে ফিরে আসছেন জেলেরা। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। তবে ভাদ্র মাসের এই ভরা মৌসুমে আশানুরূপ ইলিশ পেলে তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি জেলেদের গায়ে লাগতো না বলেও মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
ভরা মৌসুমেও আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়ায় চিন্তিত জেলেরা। হতাশায় রয়েছেন আড়তদার, পাইকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাই। তবে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন, প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে এবং ইলিশের ডিম ছাড়ার সময় হলে নদীতে ইলিশের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
সরেজমিন গেলে জেলেরা জানান, ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে চলছে ইলিশের ভরা মৌসুম। আর ভরা মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ শিকারের আশায় দিনরাত মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে জাল নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন জেলেরা। কিন্তু জেলেদের জালে মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ। ফলে চরম হতাশা নিয়ে তীরে ফিরে আসছেন তারা। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে ইলিশ শিকারের খরচ বেড়ে গেছে প্রায় দেড় গুণ। জেলেরা বলছেন, নদীতে গিয়ে দুই চারটি যে ইলিশ পাচ্ছেন তা ঘাটে বিক্রি করে পারিবারের সদস্যদের জন্য খাবার জোগার করা তো দূরের কথা ট্রলারের তেলের খরচও ঠিকমত উঠছে না।
জেলেরা আরও জানান, মহাজনের দাদনতো রয়েছেই। এর বাইরেও বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে জাল, নৌকা ও ট্রলার মেরামত করে এখন কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কেউ কেউ। আবার অনেক জেলে নিরুপায় হয়ে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায় অনেকেই ঢাকা চট্টগ্রাম গিয়ে রিক্সা চালাচ্ছেন কিংবা দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন। অনেক জেলে পরিবারকে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।
অন্যদিকে নদীতে জেলেদের জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা না পড়ায় জমে উঠেনি মাছ ঘাটগুলো। আড়তদারদের দাবি ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন পাইকারী আড়ত থেকে দাদন নিয়ে নদীতে জেলেদেরকে দিয়েছেন। নদীতে মাছ না পাওয়ায় মোকামে ইলিশ পাঠাতে পারছেন না। যে পরিমাণ মাছ এখন কেনা বেচা হচ্ছে তাতে কোন কোন দিন গদি খরচও উঠছে না।
তবে গত দুই সপ্তাহ হল সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ার কারণে অনেক জেলে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। অনেক জেলে নিখোঁজ হয়েছেন। এতে জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। তাই অনেক জেলে সাগরে যাচ্ছেন না। তবে সাগরে গিয়ে মাছ ধরছেন এমন জেলেরা জানান, সাগর মোহনায় চর জেগে যাওয়ায় ইলিশ মাছ নদীতে আসতে পারছে না। অত্যধিক বৃষ্টিপাত হলে নদীর গভীরতা বাড়লে হয়তো মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে ইলিশের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ জানান, একদিকে নদীতে চর জেগেছে, অপর দিকে অবৈধভাবে জাল পেতে রাখায় নদীতে ইলিশ মাছ আসার পথে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এমন ভরা মৌসুমেও ইলিশের পরিমাণ কম। তবে তিনি আশা করছেন আর কিছু দিনের মধ্যে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে নদীতে জেলেরা ইলিশের দেখা পাবেন।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, গত মৌসুমে ইলিশ আহরণের লক্ষমাত্রা ছিল ১ লক্ষ ৬০ হাজার মেট্রিকটন। আহরণ করা হয়েছিল ১ লক্ষ ৭৯ হাজার মেট্রিকটন। আর চলতি মৌসুমে ১ লক্ষ ৯২ হাজার মেট্রিকটন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে ভোলার সাত উপজেলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে মাছ শিকার করে জীর্বিকা নির্বাহ করে প্রায় আড়াই লাখ জেলে। তবে সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা রয়েছে প্রায় দেড় লাখ।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল