নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের পিটুনির শিকার ছাত্রলীগ নেতা জামিউল ইসলাম জীবনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে জানান হাসপাতালের পরিচালিক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. শামীম ইয়াজদানি।
তিনি বলেন, গত সোমবার রাতে জীবনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানে তাকে লাইফ সাপর্টে রাখা হয়েছিল। শুক্রবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটে তিনি মারা যান। জামিউল ইসলাম জীবন নলডাঙ্গা উপজেলার রামশাকাজিপুর আমতলি গ্রামের ফরহাদ হোসেনের ছেলে। জীবন উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ছিলেন এবং নলডাঙ্গা ডিগ্রী কলেজের ছাত্র।
জীবনের চাচা উপজেলা অাওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক, কলেজ শিক্ষক এসএম ফিরোজ বলেন, তাদেরকে শুক্রবার সোয়া দুটার দিকে ভাতিজা জীবনের মৃত্যুর বিষটি নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তিনি আরো বলেন, আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা আমার ভাতিজা জামিউল আলীম জীবনকে বুধবার সকালে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পর চিকিৎসকরা মৌখিকভাবে জানান জীবন মারা গেছে। কিন্তু হঠাৎ করেই তাকে আবারও আইসিইউতে নেয়া হয় এবং লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়।
পরে আমরা আইসিইউ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তবে আমাদের জানানো হয় জীবন জীবিত থাকায় তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। আরও ৭২ ঘন্টা লাইফ সার্পটে থাকবে। এ ধরনের নাটক শেষে আজ শুক্রবার দুপুরে আমার ভাতিজার জীবনাবসানের সংবাদটি নিশ্চিত করা হয়েছে। এখন চলছে ময়নাতদন্তের কার্যক্রম। ময়নাতদন্ত শেষে রাজপাড়া থানার মাধ্যমে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে বলে জেনেছি। ময়নাতদন্ত শেষে আরও কোন নাটকের অবতারনা হতে পারে বলে শংকায় রয়েছি।
উল্লেখ্য, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধের জেরে নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের পিটুনিতে আহত হন জামিউল ইসলাম জীবন ও তার পিতা ফরহাদ হোসেন। দুজনকেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় জামিউল ইসলাম জীবনকে আইসিইউতে লাইফ সার্পটে রাখা হয়। এই দিনই জীবনের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে নিহতের পরিবারে শুরু হয় শোকের মাতম।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বিরুদ্ধে মসজিদের মাইক চুরির সালিশে পক্ষপাতিত্ব এবং দুর্নীতির অভিযোগ তোলে ফেসবুক লাইভ করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক জামিউল ইসলাম জীবন। এর জের ধরে পরের দিন ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে নলডাঙ্গা উপজেলার রামশাকাজিপুর আমতলী বাজারে জীবনকে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পেটান আসাদুজ্জামান আসাদ, ও তার দুইভাইসহ ৫ জন। এ সময় বাধা দেওয়ায় জীবনের বাবা ফরহাদ হোসেনকেও পেটানো হয়। আহতদের উদ্ধার করে রাতেই প্রথমে নাটোর সদর হাসপাতাল ও পরে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরের পরদিন ফরহাদ হোসেনকে ছাড়পত্র দেন চিকিৎসকরা। তবে জীবনকে পাঠানো হয় আইসিউতে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরেই জীবনের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ও তার ২ ভাইসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলা দায়েরের পরদিন পুলিশ মামলার আসামি উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের ভাই আলিম আল রাজীকে গ্রেপ্তার করে।
নলডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোন ধরনের বিশৃংখলা ঠেকাতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএ