নদী বেষ্টিত জেলা মানিকগঞ্জ। এখন দেখে বোঝার উপায় নেই এগুলো নদী না ফসলী জমি, না খেলার মাঠ। অপরিকল্পিত বাধ নির্মাণ, রাস্তা, ব্রীজ কালভার্ট তেরী, দখল দূষনসহ উজানের পলিতে ভরে গেছে এসব নদী। কিছু কিছু জায়গায় খনন করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
বেশির ভাগ নদী ভরাট হয়ে চরাঞ্চলে পরিনত হয়েছে। কোথাও চলছে চাষাবাদ। কোথাও তৈরী হচ্ছে বাড়িঘর, কোথাও অবৈধ মাটি ব্যবসায়ীরা নদীকে করছে ক্ষতবিক্ষত, বদলে যাচ্ছে মানিকগঞ্জের মানচিত্র। ১৩৭৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মানিকগঞ্জ, যার নদীর দৈর্ঘই ২৪১ কিলোমিটার।
জানা যায়, এক সময় জেলার আজিমনগর, লেছড়াগঞ্জ, জাগির, বেইথাঘাট, জাফরগঞ্জ সর্বত্রই নদীবন্দর ছিল এসব এলাকা থেকে বড় বড় ষ্টীমার, লঞ্চ, নৌকা দেশ বিদেশে চলাচল করতো। এখন এসব কেবলই স্মৃতি। কালের বিবর্তনে মানিকগঞ্জের মধ্যদিয়ে প্রবাহমান ইছামতি, ধলেশ্বরী, কালীগঙ্গাসহ অনেই নদীই এখন মৃত প্রায়। বর্ষা মৌসুম ছাড়া এ নদীগুলো থাকে পানি শুন্য। নদীর বুকজুরে ধুধু বালুচর, কোথাও চাষাবাদ, কোথাও গরু চরানো কিংবা দুরন্তদের খেলাধুলার দৃশ্য চোখে পড়ে। কলকারখানার বর্জে বিষাক্ত হয়ে পরেছে ধলেশ্বরী নদীর জাগীর, গোলড়া এবং কালিগঙ্গা নদীর ত্বরা, বান্দুটিয়া, বেউথাসহ বৃহৎ এলাকা।
গোলড়া এলাকার ইয়ার আলী ( ৭৯), মোঃ সোনামুদ্দিনসহ অনেকেই জানান, উজানের বালিতে নদী ভরাট হয়ে গেছে। তার পরে কিছু কিছু জায়গায় পানি থাকলেও কারখানার বর্জে এ পানি কোন কাজে আসে না। পানিতে মানুষ তো দূরের কথা পশুও নামানোর উপায় নেই এ নদীতে। বেউথা এলাকার লোকজন জানান, কারখানার বর্জে কালিগঙ্গার পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। নদীতে বর্জ না ফেললে যা পানি থাকে তাতেই নদী পারের মানুষ বেঁচে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র মতে, মানিকগঞ্জ জেলার মাঝ দিয়ে বয়ে চলা ধলেশ্বরী,পুরাতন ধলেশ্বরী, কালীগঙ্গা, ইছামতি নামে চারটি নদী রয়েছে যাহার দৈর্ঘ প্রায় ২৪১ কিলোমিটার। ধলেশ্বরী নদী ঘিওর উপজেলার যাবরা থেকে শুরু করে সাটুরিয়ার তিল্লী, বরাইদ হয়ে জাগিরের ভিতর দিয়ে সিঙ্গাইর এর শেষ মাথা পর্যন্ত মিশেছে। যার দৈর্ঘ প্রায় ৬০ কিলোমিটার। পুরাতন ধলেশ্বরী নদীটি দৌলতপুর উপজেলার মূল যমুনা থেকে শুরু হয়ে ঘিওর উপজেলার যাবরা নামক স্থানে এসে শেষ হয়। দৈর্ঘ ২৬ কিলোমিটার। যাবরা থেকে শুরু হয়ে সিংগাইরের ধল্যা পর্যন্ত কালীগঙ্গা নদীর অবস্থান যার দৈর্ঘ্য ৩৫ কিলোমিটার ।শিবালয় উপজেলা থেকে শুরু করে উথুলী হয়ে হরিরামপুর পদ্মা নদীর সংগে মিশেছে ইছামতি নদী। দৈর্ঘ প্রায় ৮০ কিলোমিটার। এছাড়া যমুনা নদী দৌলতপুর থেকে পাটুরিয়াঘাটে এসে শেষ হয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ৪০ কিলো মিটার।
তাছাড়া পদ্মা নদী হরিরামপুরের ৫টি ইউনিয়নকে বেষ্টিত করে রেখেছে। পদ্মা, যমুনা নদী ছাড়া সকল নদীই এখন মৃত। ইতিমধ্যে বেশকিছু নদী বিলীন হয়ে গেছে। যে নদীগুলো নামে টিকে আছে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এগুলো একসময় গভীর নদী ছিল, জেলা থেকে বিভিন্ন জায়গায় যাবার মাধ্যম ছিল এই নদীপথ। কালের বিবর্তনে অপরিকল্পিত রাস্তা ঘাট, ব্রীজ, কালভার্ট নির্মাণ, এবং উজান থেকে চলে আসা মাটিবালুতে নদীগুলো ভরাট হয়ে ধুধু চরাঞ্চলে পরিনত হয়েছে।
নদীতে পানি না থাকায় দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে। ফলে মৎসজীবিরা সম্পূর্ণ বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। নদী মরে যাওয়ার ফলে কৃষিতে সেচ কাজ দারুনভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এক সময় কালীগঙ্গা নদীতীরবর্তী বেউথা ঘাট, ধলেশ্বরী নদীতে জাগীর ব্রীজ সংলগ্ন ও জাফরগঞ্জ বাজার ছিল জেলার সবচেয়ে বড় নদী বন্দর। এসব নদীবন্দর থেকে বড় বড় ষ্টীমার, লঞ্চ, নৌকা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলাচল করতো। ঢাকা আরিচা মহাসড়কে তরাঘাট নামকস্থানে কালীগঙ্গা নদীতে ফেরী সার্ভিস চালু ছিল।
জানা যায়, সর্বপ্রথম সড়ক পথে সবচেয়ে বড় আকারের ব্রীজটি ঢাকা আরিচা মহাসড়কের কালীগঙ্গা নদীতে তরাঘাট এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। পানি না থাকার কারনে মানিকগঞ্জের সকল নদীবন্দর গুলি তার কার্যক্রম হারিয়ে ফেলেছে। এগুলো স্মৃতি বহন করে চলছে। ধলেশ্বরী ও কালীগঙ্গা নদীর বুকজুরে এখন বোর, ভূট্টা মাশকলাই,তামাকসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ হচ্ছে। এক সময়ের তীব্র খোরস্রোত কালীগঙ্গা এখন চাষাবাদ, গো-চরণ, দুরন্তদের খেলাধুলা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বিডি প্রতিদিন/এএ